Skip to main content

প্রশ্নোত্তরঃ জাহেলিয়া যুগের রাজনৈতিক অবস্থা আলোচনা কর। অথবা, জাহেলিয়া যুগের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল? ব্যাখ্যা কর। অথবা, প্রাক-ইসলামী আরবের রাজনৈতিক চিত্র তুলে ধর।

ভূমিকাঃ ইসলাম পূর্ব যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল বিশৃঙ্খলাপূর্ণ এবং হতাশাব্যঞ্জক। কেন্দ্রী শাসনের অভাবে সমগ্র আরব শত সহস্র গোত্রে বিভক্ত ছিল। এই গোত্রি ছিল আরবদের রাজনৈতিক জীবনেরব মূলন ভিত্তি।
জাহেলিয়া যুগে রাজনৈতিক অবস্থাঃ জাহেলিয়া যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। ইসলাম পূর্ব আরবে কোম কেন্দ্রীয় সরকার ছিল না। উত্তর আরবে বাইজান্টাইন এবং দক্ষিণ আরবের পারস্য প্রভাবিত কয়েকটি রাজ্য ছাড়া সমগ্র আরব এলাকা ছিল স্বাধীন। এ কারণে আররের রাজনৈতিক অবস্থাও ছিল অস্থিতিশীল  ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ।  সমগ্র আরব ছিল শত শত গোত্রে বিভক্ত। গোত্র শাসনই ছিল আরবীয়দের রাষ্ট্রীয়  জীবনের মূল ভিত্তি। গোত্রের প্রধান বা দলপতিকে বলা হতো শেখ। শেখ নির্বাচিত হবার জন্য বংশ গৌরব, মহানুভবতা, বীরত্ব প্রভৃতি মানবিক গুণাবলীর প্রয়োজনে হতো। কোন কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত না থাকায় আরব গোত্রগুলো প্রায় কলহে লিপ্ত থাকত।  কোন গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের যুদ্ধ বাধলে তা যুগ যুগ ধরে চলত। গোত্র যুদ্ধের মূল ম্নত্র ছিল "Blood for blood"। কখনও খুনের কেসারত " Blood money" প্রদান করলে যুদ্ধের অবসান হতো। মক্কায় কুরাইশ গোত্রপতিদের চেষ্টায় গঠিত হয় মালা বা মন্ত্রনা পরিষদ। মক্কায় বসবাসরত বিভিন্ন গোষ্ঠীর অধিপতিদের নিয়ে এই পরিষদ গঠিত হয়েছিল। মালা কেবল পরামর্শ প্রদান করতে পারত।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে আরবীয়দের রাজনৈতিক জীবন ছিল অনেকটা গোত্র নির্ভর শাসন। তারা নিজ গোত্রের প্রতি আনুগত্য মনোভাব দেখালেও অন্য গোত্রের সাথে সর্বদা যুদ্ধে লিপ্ত থাকত।

Comments

Popular posts from this blog

প্রশ্নোত্তরঃ আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে কি বুঝ? অথবা, আইয়্যামে জাহেলিয়া কি?

ভূমিকাঃ ইসলামের আবির্ভাব মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইসলাম পূর্ব আরবের সামাজিক জীবন অনাচার, কুসংস্কার, নিষ্ঠুরতা ও নানা পাপাচারে পরিপূর্ণ ছিল। ঐ সময়ে আরবে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা বিদ্যমান ছিল। এ বিশৃঙ্খলা অবস্থাকে 'আইয়ামে জাহেলিয়া যুগ' বলা হয়েছে। আইয়ামে জাহেলিয়াঃ  ইসলাম পূর্ব যুগকে সাধারণভাবে 'আইয়ামে জাহেলিয়া'  বা অন্ধকার যুগ বলা হয়। আরবি ভাষায় 'আইয়াম' শব্দের অর্থ যুগ বা সময় এবং 'জাহেলিয়া' অর্থ অন্ধকার যুগ, কুসংস্কার, অজ্ঞাত ইত্যাদি। সুতরাং আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে অজ্ঞতার যুগ বা অন্ধকার যুগ  বুঝায়। সে যুগে আরবে কোন প্রকার কৃষ্টি, ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মীয় চেতানা ছিল না। তবে প্রকৃত পক্ষে ইসলাম পূর্ব আরবীয়দের অজ্ঞ বলে অবহেলা করা যায় না। অজ্ঞ এই অর্থে বলা হয় সে যুগে আরবে কোন ধর্মপ্রচারক, সমাজসংস্কারক, শান্তি স্থাপনকারী ছিল না এবং আল্লাহ সম্পর্কে তারা অজ্ঞ ছিল। আইয়ামে জাহেলিয়ার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টি বলেন, " আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে এমন একটি সময়কাল কে বুঝায়, যখন আরবে কোন বিধিবিধান ছিল না, কোন ধর্মপ্রচারক ছিল না, কোম ধর্মগ্রন্থ ছিল না।

প্রশ্নোত্তরঃ উকাজ মেলা সম্পর্কে যা জানো লিখ। অথবা, উকাজ মেলা সম্পর্কে আলোচনা কর। অথবা, উকাজ মেলা কি?

ভূমিকাঃ  আরবদের মধ্যে যে সাহিত্যচর্চা প্রচলিত উকাজের মেলা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রাচীন আরবের কবিরা মক্কার অদূরে উকাজের বাৎসরিক মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতেন। সেখানে নাচাগান, নানাপ্রকার খেলাধুলা, ঘোড়দৌড় ও উঠের দৌড়ের প্রতিযোগিতা হতো। অন্যদিকে, প্রতি বছর এ মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতা হতো। কথিত আছে, উকাজের মেলায় পুরস্কার প্রাপ্ত সাতটি কবিতা সোনালি অক্ষরে লিপিবদ্ধ করে কাবার দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়া হতো। একে আরবিতে 'সাব আল মুয়াল্লাকা' বলা হতো। উকাজ মেলাঃ  প্রাক ইসলামি যুগে গীতিকাব্য রচনা ও সাহিত্য চর্চায় আরবদের বিস্ময়কর সৃজনশীল শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। গীতিকবিতা বা কাসিদা ছিল প্রাচীন আরব সংস্কৃতির অন্যতম সম্পদ। ঐতিহ্যবাহী হিট্টি বলেন, "কাব্য প্রীতিই ছিল বেদুইনদের সাংস্কৃতিক সম্পদ।" সে যুগে আরবদের মধ্যে যে সাহিত্য চর্চা প্রচলিত ছিল, উকাজের মেলা এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ। প্রতি বছর এ মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। এ  সাহিত্য সভায় কাব্য চর্চার দ্বারা সংশ্লিষ্ট কবিগণ নিজেদের কৃতিত্ব প্রকাশ করতেন। বৎসরে সেরা কবিতা গুলোকে মিশরের লিলেন কাপড়ের উপর লিখে কা

প্রশ্নোত্তরঃ বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি হয় কীভাবে? অথবা, বাংলা নামের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে? অথবা, বঙ্গ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ  বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। কারো কারো মতে, বঙ্গ নাম থেকেই বঙ্গাল এবং পরবর্তীতে বাঙালা নামের উৎপত্তি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, অতীতের বং নামের এক জনগোষ্ঠী  এ অঞ্চলে বসবাস করত এবং তাদের নাম অনুযায়ী অঞ্চলটি বঙ্গ নামে পরিচিত লাভ করে। আবার অনেকেই মনে করেন জলমগ্ন স্যাঁতস্যাঁতে অঞ্চলকে বঙ্গ বা বাংলা বলা হয়।  বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তিঃ  নিম্নে বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ ১. ভ্রমণকারীদের লেখনীতে বাংলাঃ  ইংরেজ শাসনকালে বাংলা 'বেঙ্গল' (Bengal) নামে পরিচিত ছিল। ষোলো ও সতেরো শতকে ইউরোপীয়দের লেখনীতে 'বেঙ্গালা' নামের দেশের উল্লেখ পাওয়া যায়। মার্কা পোলো বেঙ্গালা শহরের উল্লেখ করছেন। গ্যাস্টলদি তাঁর মানচিত্রে চাটিগ্রামের পশ্চিমে বেঙ্গালার অবস্থিত দেখিয়েছেন। ২. আহমদ রফিকের মতেঃ  আহমদ রফিক 'বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ' গ্রন্থে বলেছেন,'......... তবে গঙ্গারাষ্ট্র বা গঙ্গাহৃদি নামীয় স্বাধীন বাংলা-ভূখন্ড সর্বপ্রাচীন রাজ্য হিসেবে স্বীকৃত। ৩. অজয় রায়ের মতেঃ   অজয় রায় 'বাঙালির জন্ম' প্রবন্ধে বলেন, 'বঙ্গ&#