Skip to main content

প্রশ্নোত্তরঃ সাব আল মুয়াল্লাকা বা সপ্ত ঝুলন্ত কবিতা কি?

ভুমিকাঃ ইসলাম পূর্ব যুগে আরদের মধ্যে কাব্যচর্চার প্রচলন ছিল। কাব্যের প্রতি আরবদের  আগ্রহ ছিল প্রবল। কবিতার মাধ্যমে আরবরা তাদের দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা সংরক্ষণ করে রাখত। এসব কবিতার মধ্যে গীতি কবিতা ছিল অন্যতম। এসব গীতি কবিতার মধ্যে সাব আল মুয়াল্লাকা ছিল অন্যতম। সাতজন কবি মিলে এ সাব আল মুয়াল্লাকা রচনা করেন।
সাব আল মুয়াল্লাকাঃ আরবের কবিরা মক্কার অদূরে উকাজ বাৎসরিক মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতেন। এ প্রতিযোগিতায় আরবের বড় বড় কবিরা স্বরচিত কবিতার প্রতিযোগিতা করতেন। আরবের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হতেন। বৎসরের সেরা কবিতাগুলোকে সোনালী হরফে মিশরের লিলেন কাপরের উপর লিখে কাবা ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়া হতো। এরুপ সাতটি কবিতার সমষ্টি 'সাব আল মুয়াল্লাকা' বা 'Seven suspended poems' নামে অভিহিত। ইমরুল কায়েস, তারাফা লাবিদ, হারিস, আনতারা প্রমুখ ছিলেন মুয়াল্লাকার প্রধান প্রধান কবি। এদের মধ্যে অসাধারণ প্রতিভাশালী ছিলেন ইমরুল কায়েস। তিনি প্রাক ইসলামি যুগে শ্রেষ্ঠ কবির মর্যাদা লাভ করেন।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, প্রাক ইসলামি যুগে সাহিত্য বলতে কবিতাকে বুঝাতো। আর এসব কবিতার শীর্ষস্থানীয় রচনার সমষ্টি হল সাব আল মুয়াল্লাকা। এটি ছিল আরববাসীদের প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যাতে তারা তাদের সাংস্কৃতিক জীবনের ছাপ সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেন অত্যন্ত নিখুঁতভাবে।

Comments

Popular posts from this blog

প্রশ্নোত্তরঃ আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে কি বুঝ? অথবা, আইয়্যামে জাহেলিয়া কি?

ভূমিকাঃ ইসলামের আবির্ভাব মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইসলাম পূর্ব আরবের সামাজিক জীবন অনাচার, কুসংস্কার, নিষ্ঠুরতা ও নানা পাপাচারে পরিপূর্ণ ছিল। ঐ সময়ে আরবে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা বিদ্যমান ছিল। এ বিশৃঙ্খলা অবস্থাকে 'আইয়ামে জাহেলিয়া যুগ' বলা হয়েছে। আইয়ামে জাহেলিয়াঃ  ইসলাম পূর্ব যুগকে সাধারণভাবে 'আইয়ামে জাহেলিয়া'  বা অন্ধকার যুগ বলা হয়। আরবি ভাষায় 'আইয়াম' শব্দের অর্থ যুগ বা সময় এবং 'জাহেলিয়া' অর্থ অন্ধকার যুগ, কুসংস্কার, অজ্ঞাত ইত্যাদি। সুতরাং আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে অজ্ঞতার যুগ বা অন্ধকার যুগ  বুঝায়। সে যুগে আরবে কোন প্রকার কৃষ্টি, ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মীয় চেতানা ছিল না। তবে প্রকৃত পক্ষে ইসলাম পূর্ব আরবীয়দের অজ্ঞ বলে অবহেলা করা যায় না। অজ্ঞ এই অর্থে বলা হয় সে যুগে আরবে কোন ধর্মপ্রচারক, সমাজসংস্কারক, শান্তি স্থাপনকারী ছিল না এবং আল্লাহ সম্পর্কে তারা অজ্ঞ ছিল। আইয়ামে জাহেলিয়ার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টি বলেন, " আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে এমন একটি সময়কাল কে বুঝায়, যখন আরবে কোন বিধিবিধান ছিল না, কোন ধর্মপ্রচারক ছিল না, কোম ধর্মগ্রন্থ ছিল না।

প্রশ্নোত্তরঃ উকাজ মেলা সম্পর্কে যা জানো লিখ। অথবা, উকাজ মেলা সম্পর্কে আলোচনা কর। অথবা, উকাজ মেলা কি?

ভূমিকাঃ  আরবদের মধ্যে যে সাহিত্যচর্চা প্রচলিত উকাজের মেলা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রাচীন আরবের কবিরা মক্কার অদূরে উকাজের বাৎসরিক মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতেন। সেখানে নাচাগান, নানাপ্রকার খেলাধুলা, ঘোড়দৌড় ও উঠের দৌড়ের প্রতিযোগিতা হতো। অন্যদিকে, প্রতি বছর এ মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতা হতো। কথিত আছে, উকাজের মেলায় পুরস্কার প্রাপ্ত সাতটি কবিতা সোনালি অক্ষরে লিপিবদ্ধ করে কাবার দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়া হতো। একে আরবিতে 'সাব আল মুয়াল্লাকা' বলা হতো। উকাজ মেলাঃ  প্রাক ইসলামি যুগে গীতিকাব্য রচনা ও সাহিত্য চর্চায় আরবদের বিস্ময়কর সৃজনশীল শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। গীতিকবিতা বা কাসিদা ছিল প্রাচীন আরব সংস্কৃতির অন্যতম সম্পদ। ঐতিহ্যবাহী হিট্টি বলেন, "কাব্য প্রীতিই ছিল বেদুইনদের সাংস্কৃতিক সম্পদ।" সে যুগে আরবদের মধ্যে যে সাহিত্য চর্চা প্রচলিত ছিল, উকাজের মেলা এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ। প্রতি বছর এ মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। এ  সাহিত্য সভায় কাব্য চর্চার দ্বারা সংশ্লিষ্ট কবিগণ নিজেদের কৃতিত্ব প্রকাশ করতেন। বৎসরে সেরা কবিতা গুলোকে মিশরের লিলেন কাপড়ের উপর লিখে কা

প্রশ্নোত্তরঃ বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি হয় কীভাবে? অথবা, বাংলা নামের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে? অথবা, বঙ্গ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ  বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। কারো কারো মতে, বঙ্গ নাম থেকেই বঙ্গাল এবং পরবর্তীতে বাঙালা নামের উৎপত্তি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, অতীতের বং নামের এক জনগোষ্ঠী  এ অঞ্চলে বসবাস করত এবং তাদের নাম অনুযায়ী অঞ্চলটি বঙ্গ নামে পরিচিত লাভ করে। আবার অনেকেই মনে করেন জলমগ্ন স্যাঁতস্যাঁতে অঞ্চলকে বঙ্গ বা বাংলা বলা হয়।  বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তিঃ  নিম্নে বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ ১. ভ্রমণকারীদের লেখনীতে বাংলাঃ  ইংরেজ শাসনকালে বাংলা 'বেঙ্গল' (Bengal) নামে পরিচিত ছিল। ষোলো ও সতেরো শতকে ইউরোপীয়দের লেখনীতে 'বেঙ্গালা' নামের দেশের উল্লেখ পাওয়া যায়। মার্কা পোলো বেঙ্গালা শহরের উল্লেখ করছেন। গ্যাস্টলদি তাঁর মানচিত্রে চাটিগ্রামের পশ্চিমে বেঙ্গালার অবস্থিত দেখিয়েছেন। ২. আহমদ রফিকের মতেঃ  আহমদ রফিক 'বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ' গ্রন্থে বলেছেন,'......... তবে গঙ্গারাষ্ট্র বা গঙ্গাহৃদি নামীয় স্বাধীন বাংলা-ভূখন্ড সর্বপ্রাচীন রাজ্য হিসেবে স্বীকৃত। ৩. অজয় রায়ের মতেঃ   অজয় রায় 'বাঙালির জন্ম' প্রবন্ধে বলেন, 'বঙ্গ&#