Skip to main content

প্রশ্নোত্তরঃ হিজরত বলতে কী বুঝ? অথবা, হিজরত কী?

ভূমিকাঃ হযরত মুহাম্মদ (স)  প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করা পর থেকেই মক্কার কাফিররা তার উপর নানা অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ন চালায় ইসলামের প্রচার বন্ধ করার জন্য। কিন্তু তিনি সব অত্যাচার সহ্য করেও ইসলাম প্রচার চালিয়ে যায়। অতঃপর মক্কার বিধর্মী কুরাইশরা হযরত মুহাম্মদ (স) কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে আল্লাহর প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হয়ে তিনি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন। 
হিজরতের পরিচয়ঃ 'হিজরত' শব্দটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ দেশত্যাগ,  ছেড়ে দেয়া, বর্জন করা, ফেলে আসা ও স্থানান্তরিত হওয়া। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মাতৃভূমি ত্যাগ করে অন্য কোন দেশে যাওয়াকে হিজর বলে। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে হযরত মুহাম্মদ (স)  এর মক্কা থেকে ইয়াসরিব বা মদিনা গমনকে হিজরত বলে।
মক্কার কাফিররা দারুল নাদওয়া নামক বৈঠকে রাসূল (স) কে হত্যার দিনক্ষণ ঠিক করলে রাসূল (স) তাদের এ ষড়যন্ত্র জানতে পারেন। হযরত মুহাম্মদ (স)  হযরত আবু বকর (রা) এর গৃহে গমন করেন এবং তাকে অবগত করান। ' দারুল নাদওয়া' বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হত্যাসংঘ রাতে কুরাইশরা হযরত মুহাম্মদ (স)  এর গৃহ ঘিরে রাখে। সে রাতেই হযর‍ত আলী (রা) কে নিজ বিছানায় শুইয়ে রেখে মহানবী (স) হযরত আবুওবকর (রা) কে সাথে নিয়ে ইয়াসরিবের উদ্দেশ্যে রওনা দেন এবং আলী (রা)  গচ্ছিত আমানত ফেরত দানের নির্দেশ দেন। তিনি  ৬২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মক্কা হতে ২৫০ মাইল দূরে মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, হযরত মুহাম্মদ (স)  এর এবং ইসলামের ইতিহাসে  হিজরত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কারণ, হিজরতের ফলে মহানবীর মক্কা জীবনের অত্যাচার, লাঞ্চনার অবসান ঘটে, অন্যদিকে তিনি প্রভূত সম্মান ও সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব লাভ করেন।

Comments

Popular posts from this blog

প্রশ্নোত্তরঃ আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে কি বুঝ? অথবা, আইয়্যামে জাহেলিয়া কি?

ভূমিকাঃ ইসলামের আবির্ভাব মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইসলাম পূর্ব আরবের সামাজিক জীবন অনাচার, কুসংস্কার, নিষ্ঠুরতা ও নানা পাপাচারে পরিপূর্ণ ছিল। ঐ সময়ে আরবে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা বিদ্যমান ছিল। এ বিশৃঙ্খলা অবস্থাকে 'আইয়ামে জাহেলিয়া যুগ' বলা হয়েছে। আইয়ামে জাহেলিয়াঃ  ইসলাম পূর্ব যুগকে সাধারণভাবে 'আইয়ামে জাহেলিয়া'  বা অন্ধকার যুগ বলা হয়। আরবি ভাষায় 'আইয়াম' শব্দের অর্থ যুগ বা সময় এবং 'জাহেলিয়া' অর্থ অন্ধকার যুগ, কুসংস্কার, অজ্ঞাত ইত্যাদি। সুতরাং আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে অজ্ঞতার যুগ বা অন্ধকার যুগ  বুঝায়। সে যুগে আরবে কোন প্রকার কৃষ্টি, ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মীয় চেতানা ছিল না। তবে প্রকৃত পক্ষে ইসলাম পূর্ব আরবীয়দের অজ্ঞ বলে অবহেলা করা যায় না। অজ্ঞ এই অর্থে বলা হয় সে যুগে আরবে কোন ধর্মপ্রচারক, সমাজসংস্কারক, শান্তি স্থাপনকারী ছিল না এবং আল্লাহ সম্পর্কে তারা অজ্ঞ ছিল। আইয়ামে জাহেলিয়ার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টি বলেন, " আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে এমন একটি সময়কাল কে বুঝায়, যখন আরবে কোন বিধিবিধান ছিল না, কোন ধর্মপ্রচারক ছিল না, কোম ধর্মগ্রন্থ ছিল না।...

প্রশ্নোত্তরঃ উকাজ মেলা সম্পর্কে যা জানো লিখ। অথবা, উকাজ মেলা সম্পর্কে আলোচনা কর। অথবা, উকাজ মেলা কি?

ভূমিকাঃ  আরবদের মধ্যে যে সাহিত্যচর্চা প্রচলিত উকাজের মেলা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রাচীন আরবের কবিরা মক্কার অদূরে উকাজের বাৎসরিক মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতেন। সেখানে নাচাগান, নানাপ্রকার খেলাধুলা, ঘোড়দৌড় ও উঠের দৌড়ের প্রতিযোগিতা হতো। অন্যদিকে, প্রতি বছর এ মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতা হতো। কথিত আছে, উকাজের মেলায় পুরস্কার প্রাপ্ত সাতটি কবিতা সোনালি অক্ষরে লিপিবদ্ধ করে কাবার দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়া হতো। একে আরবিতে 'সাব আল মুয়াল্লাকা' বলা হতো। উকাজ মেলাঃ  প্রাক ইসলামি যুগে গীতিকাব্য রচনা ও সাহিত্য চর্চায় আরবদের বিস্ময়কর সৃজনশীল শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। গীতিকবিতা বা কাসিদা ছিল প্রাচীন আরব সংস্কৃতির অন্যতম সম্পদ। ঐতিহ্যবাহী হিট্টি বলেন, "কাব্য প্রীতিই ছিল বেদুইনদের সাংস্কৃতিক সম্পদ।" সে যুগে আরবদের মধ্যে যে সাহিত্য চর্চা প্রচলিত ছিল, উকাজের মেলা এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ। প্রতি বছর এ মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। এ  সাহিত্য সভায় কাব্য চর্চার দ্বারা সংশ্লিষ্ট কবিগণ নিজেদের কৃতিত্ব প্রকাশ করতেন। বৎসরে সেরা কবিতা গুলোকে মিশরের লিলেন কাপড়ের উপর লিখে কা...

প্রশ্নোত্তরঃ বাঙালিকে সংকর জাতি বলা হয় কেন? অথবা, "বাঙালি একটি সংকর জাতি।"- ব্যাখ্যা কর। অথবা, বাঙালি স্বতন্ত্র না কি সংকর জাতি?

ভূমিকাঃ  বাঙালি নরগোষ্ঠী বহুকাল ধরে বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। কালের গতি ধারায় বিভিন্ন জাতি বর্ণের রক্তপ্রবাহ বাঙালি জাতির ধমনীতে প্রবাহিত হয়েছে। এ কারণে অনেক নৃবিজ্ঞানী বাঙালি জাতিকে সংকর জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বাঙালি কে সংকর জাতি বলার কারণঃ  র্দীঘকাল বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে এ আদি মানুষেরা বঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বসবায়া শুরু করে৷ এসব জনগোষ্ঠী একে অপরের সাথে মিশ্রিত হয় শতকের পর শতকব্যাপী। মনে করা হয়, আদি অস্ট্রেলীয়রাই বাংলার প্রাচীনতম বাসিন্দা। বাংলাদেশের সাঁওতাল, রাজবংশী প্রভৃতি আদি অস্ট্রেলীয়দের সাথে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের জলপ্রবাহে মঙ্গোলীয়দের রক্তেরও পরিচয় পাওয়া যায়। পারস্য জাতি ভারতবর্ষে আগমনের ফলে বাঙালির রক্তে নতুন মিশ্রণ ঘটে। অনেকের ধারণা বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর উপর আর্যদের প্রভাব রয়েছে। ব্রাহ্মণ, বৈদ্য ও কায়স্থদের মধ্যে এদের প্রভাব কম-বেশি লক্ষ করা যায়। নৃবিজ্ঞানী হটন উপমহাদেশের জনগোষ্ঠীকে যে ৮ ভাগে বিভক্ত করেছেন সেগুলোর মধ্যে আলপাইন একটি। তিনি বলেছেন, আলপাইন মানব গোষ্ঠীর সাথে বাঙালি জনগোষ্ঠীর অনেক দৈহিক মিল আছে। মূলত আলপাইন আর্যভাষী ইন্দো-ইরানী গোষ্ঠ...