প্রশ্নোত্তরঃ জাহেলিয়া যুগের আরবীয়দের ধর্মীয় জীবন আলোচনা কর। অথবা, ইসলাম পূর্ব যুগে আরবীয়দের ধর্মীয় অবস্থা আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ প্রাক ইসলামি যুগে আরবের ধর্মীয় অবস্থা শোচনীয় ও অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল না ধরনের। পৌত্তলিক, জড়বাদী, ইহুদি, খ্রিস্টান,হানাফি প্রভৃতি।
১. পৌত্তলিকঃ পুতুল পূজা বা পৌত্তলিকা ছিল আরবদের সার্বজনীন ধর্ম। আদ, সামুদ, জাদিস, জারহাম এবং আমালিক প্রভৃতি গোত্রের লোকেরা ছিল সম্পূর্ণভাবে মুশরিক বা পৌত্তলিক। আল-লাত, আল-মানাহ এবং আল-উজ্জাক নামক দেবীকে আরববাসীরা একত্রে 'আল্লাহর তিন কন্যা' বলে মনে করতো। ইসলাম পূর্ব যুগে মক্কা নগরে অবস্থিত কাবা গৃহ আরবদের শ্রেষ্ঠতম পবিত্র ধর্মমন্দির ছিল। এ মন্দিরে ৩৬০ টি দেবদেবী ছিল৷ কাবা ঘরের রক্ষিত মূর্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মূর্তি বা দেবতার নাম ছিল হোবল।
২. হানাফিঃ ধর্মীয় কুসংস্কার ও অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগেও আরবে একদল বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন যারা এক আল্লাহতে বিশ্বাস করতো এবং ইব্রাহিমের ধর্মের উপর তাদের আস্থা ছিল। এজন্য তাদের হানাফি বলা হতো। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ওরাকা ইবনে নওফেল, আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাস, কবি জুহাইর, আবুবকর, যায়েদ বিন আমর, আবু আনাস প্রমুখ। তারা একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করতেন এবং কোন প্রকার মূর্তি পূজা করতো না। কিন্তু তারা ছিল সংখ্যায় অতি নগন্য।
৩. ইহুদি ও খ্রিস্টানঃ ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের লোকেরা আসমানি কিতাবের অধিকারী এবং একেশ্বরবাদী বলে দাবী করতেন। কিন্তু ইহুদিদের বিশ্বজগতের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা ছিল না। তারা বিশৃঙ্খলা, বৈষম্য সৃষ্টিকারী ছিল। তারা আজ্ঞানবসত জেহোবাকে বিশ্ব জগতের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রণ মনে করতো। অন্যদিকে খ্রিস্টানরা ত্রিত্ত্ববাদে (ঈশ্বর পিতা, ঈশ্বর পুত্র, ঈশ্বরই পবিত্র আত্মা) বিশ্বাসী ছিল।
৪. জড়বাদীঃ বেদুইনরা ছিল আদিম জনগোষ্ঠীর মতো জড় উপাসক। উপাসকের আরা মনে করতো চাষযোগ্য জমির উর্বরতা জন্য ভূমিকা রয়েছে উপকারী দেবতার আর অনুর্বর জমির জন্য দায়ী অপদেবতা বা শয়তান। এ বিশ্বাসের সূত্র ধরে বিভিন্ন উপজারী যেমন- গাছ, জড়বস্তু, কূপ, গুহা, বালুরস্তুপকে পূজা করতো।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, প্রাক-ইস্লামি যুগে আরবের কোন ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল না। তারা বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল এবং সম্প্রদায়গত দিক থেকে তারা জড়বাদে আসক্ত ছিল। তবে ইসলামের আবির্ভাবে এ জড়বাদের অবসান ঘটে।
Comments