Skip to main content

প্রশ্নোত্তরঃ আরবের অবস্থান ব্যাখ্যা কর। অথবা, আরবের ভৌগোলিক অবস্থানের বিবরণ দাও।

ভূমিকাঃ আরব পৃথিবীর বৃহত্তম উপদ্বীপ। বিশ্ব মানচিত্রে এটি দেখতে অনেকটা ত্রিভুজাকৃতির। আরব এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ভাগে অবস্থিত। ভৌগোলিক দিক দিয়ে আরব উপদ্বীপের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম ধর্মের তীর্থস্থান এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর জন্মভূমি হিসেবে আরব উপদ্বীপের গুরুত্ব অপরিসীম।
আরবের অবস্থানঃ আরব এশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ উপদ্বীপসমূহের অন্যতম। আরবের তিন দিক পানি এবং একদিক স্থল দ্বারা পরিবেষ্টিত। এ কারণে এদেশকে আরবি ভাষায় 'জাজিরাতুল আরব' বা আরব উপদ্বীপ (Arab peninsula) বলে অভিহিত করা হয়। এর উত্তরদিকে সিরিয়ার মরুভূমি, পূর্বদিকে পারস্য উপসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং পশ্চিমে লোহিত সাগর।
আয়তনঃ বিশ্বের মানচিত্রে সবচেয়ে বড় উপদ্বীপ আরবের অবস্থান এশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে। আরব উপদ্বীপের ক্ষেত্রফল ১০,২৭,০০০ বর্গমাইল (২৬,৫৮,৭৮১ বর্গ কি.মি.) এবং জনসংখ্যা ১ কোটি ২০ লক্ষ। আয়তনে এটি ইউরোপের এক চতুর্থাংশ এবং আমেরিকার এক তৃতীয়াংশ।
ভূপ্রকৃতিঃ আরব উপদ্বীপটি পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে পারস্য উপসাগর ও মেসোপোটেমিয়ার নিম্নভূমর দিকে ক্রমশ ঢালু হয়ে নেমে গেছে। আরবের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মরুময়। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, আরব উপদ্বীপটি প্রাচীনকালে সাহারা মরুভূমির অন্তর্গত ছিল। ভূ-প্রকৃতির দিক থেকে আরব তিন ভাগে বিভক্ত।
ক.উত্তর আরবঃ উত্তর আরবের অধিকাংশ মরুভূমি হলেও কিছু কিছু মরুদ্যান আছে এবং সেখানে কিছু লোকালয় গেড়ে উঠেছে।
খ.মধ্য আরবঃ মধ্য আরবের দাহনা মরুভূমির কিছু অংশে কয়েকটি নগর গড়ে উঠেছিল এবং হেজাজ, নজদ ও আল আহসা এ তিনটি প্রদেশ নিয়ে এটি গঠিত। মক্কা, মদিনা ও তায়েফ বিখ্যাত এই তিনটি শহর হেজাজ প্রদেশে অবস্থিত।
গ.দক্ষিণ আরবঃ  দক্ষিণ আরব উপদ্বীপের সর্বাধিক উর্বর অঞ্চল। এটি ইয়েমেন, হাযরামাউত ও ওমান নিয়ে গঠিত। ইয়েমেন শব্দের অর্থ সুখী। উর্বরতা কারণে এখানে প্রচুর ফসল উৎপাদন হয়। এ অঞ্চল অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এবং কৃষি ও বাণিজ্যের জন্য প্রসিদ্ধ হওয়ায় ধনসম্পদ ও রকমারি পন্যদ্রব্যের জন্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
আরবের জলবায়ুঃ অত্যন্ত শুষ্ক ও গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোর মধ্যে আরব উপদ্বীপ অন্যতম। মরুময় বলে সমগ্র ভূভাগের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন।দক্ষিণ আরবে ভূমধ্যসাগরীর জলবায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়।
আরবের আবহাওয়াঃ আরবের আবহাওয়া শুষ্ক ও উষ্ণ। এর অভ্যন্তর ভাগে কোন নদীনালা না থাকায় মরু অঞ্চল শুষ্ক, খরতাপ ও বৃক্ষশূন্য। আরবকে 'জাজিরাতুল আরব' বলা হলেও নৌ চলাচলের উপযোগী কোন নদনদী নেই। হেজাজের গড় তাপমাত্রা প্রায় 90°F. তবে ওমান, ইয়েমেন, তায়েফ,প্রভৃতি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এখানে বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য উৎপন্ন হতো। আরবে এক মাত্র মদিনাই স্বাস্থ্যকর নগরী। এখানকার তাপমাত্রা 70°F এর কিছুটা কম থাকে। 
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা এই তিন মহাদেশের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় ভৌগোলিক দিক দিয়ে আরবের অনেক বেশি। তিনদিক পানি দ্বারা বেষ্টিত বলে এর স্থলভূমি 'জাজিরাতুল আরব' নামে পরিচিত। প্রাচীন সভ্যতাসমূহের লীলাভূমি এবং ইসলামের জন্মভূমি নামে খ্যাত আরবভূমির ভৌগোলিক অবস্থান ও বিচিত্র আবহাওয়ার কারণে মানুষের জীবন বৈচিত্রপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

Comments

Popular posts from this blog

প্রশ্নোত্তরঃ আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে কি বুঝ? অথবা, আইয়্যামে জাহেলিয়া কি?

ভূমিকাঃ ইসলামের আবির্ভাব মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইসলাম পূর্ব আরবের সামাজিক জীবন অনাচার, কুসংস্কার, নিষ্ঠুরতা ও নানা পাপাচারে পরিপূর্ণ ছিল। ঐ সময়ে আরবে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা বিদ্যমান ছিল। এ বিশৃঙ্খলা অবস্থাকে 'আইয়ামে জাহেলিয়া যুগ' বলা হয়েছে। আইয়ামে জাহেলিয়াঃ  ইসলাম পূর্ব যুগকে সাধারণভাবে 'আইয়ামে জাহেলিয়া'  বা অন্ধকার যুগ বলা হয়। আরবি ভাষায় 'আইয়াম' শব্দের অর্থ যুগ বা সময় এবং 'জাহেলিয়া' অর্থ অন্ধকার যুগ, কুসংস্কার, অজ্ঞাত ইত্যাদি। সুতরাং আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে অজ্ঞতার যুগ বা অন্ধকার যুগ  বুঝায়। সে যুগে আরবে কোন প্রকার কৃষ্টি, ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মীয় চেতানা ছিল না। তবে প্রকৃত পক্ষে ইসলাম পূর্ব আরবীয়দের অজ্ঞ বলে অবহেলা করা যায় না। অজ্ঞ এই অর্থে বলা হয় সে যুগে আরবে কোন ধর্মপ্রচারক, সমাজসংস্কারক, শান্তি স্থাপনকারী ছিল না এবং আল্লাহ সম্পর্কে তারা অজ্ঞ ছিল। আইয়ামে জাহেলিয়ার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টি বলেন, " আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে এমন একটি সময়কাল কে বুঝায়, যখন আরবে কোন বিধিবিধান ছিল না, কোন ধর্মপ্রচারক ছিল না, কোম ধর্মগ্রন্থ ছিল না।

প্রশ্নোত্তরঃ উকাজ মেলা সম্পর্কে যা জানো লিখ। অথবা, উকাজ মেলা সম্পর্কে আলোচনা কর। অথবা, উকাজ মেলা কি?

ভূমিকাঃ  আরবদের মধ্যে যে সাহিত্যচর্চা প্রচলিত উকাজের মেলা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রাচীন আরবের কবিরা মক্কার অদূরে উকাজের বাৎসরিক মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতেন। সেখানে নাচাগান, নানাপ্রকার খেলাধুলা, ঘোড়দৌড় ও উঠের দৌড়ের প্রতিযোগিতা হতো। অন্যদিকে, প্রতি বছর এ মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতা হতো। কথিত আছে, উকাজের মেলায় পুরস্কার প্রাপ্ত সাতটি কবিতা সোনালি অক্ষরে লিপিবদ্ধ করে কাবার দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়া হতো। একে আরবিতে 'সাব আল মুয়াল্লাকা' বলা হতো। উকাজ মেলাঃ  প্রাক ইসলামি যুগে গীতিকাব্য রচনা ও সাহিত্য চর্চায় আরবদের বিস্ময়কর সৃজনশীল শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। গীতিকবিতা বা কাসিদা ছিল প্রাচীন আরব সংস্কৃতির অন্যতম সম্পদ। ঐতিহ্যবাহী হিট্টি বলেন, "কাব্য প্রীতিই ছিল বেদুইনদের সাংস্কৃতিক সম্পদ।" সে যুগে আরবদের মধ্যে যে সাহিত্য চর্চা প্রচলিত ছিল, উকাজের মেলা এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ। প্রতি বছর এ মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। এ  সাহিত্য সভায় কাব্য চর্চার দ্বারা সংশ্লিষ্ট কবিগণ নিজেদের কৃতিত্ব প্রকাশ করতেন। বৎসরে সেরা কবিতা গুলোকে মিশরের লিলেন কাপড়ের উপর লিখে কা

প্রশ্নোত্তরঃ বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি হয় কীভাবে? অথবা, বাংলা নামের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে? অথবা, বঙ্গ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ  বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। কারো কারো মতে, বঙ্গ নাম থেকেই বঙ্গাল এবং পরবর্তীতে বাঙালা নামের উৎপত্তি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, অতীতের বং নামের এক জনগোষ্ঠী  এ অঞ্চলে বসবাস করত এবং তাদের নাম অনুযায়ী অঞ্চলটি বঙ্গ নামে পরিচিত লাভ করে। আবার অনেকেই মনে করেন জলমগ্ন স্যাঁতস্যাঁতে অঞ্চলকে বঙ্গ বা বাংলা বলা হয়।  বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তিঃ  নিম্নে বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ ১. ভ্রমণকারীদের লেখনীতে বাংলাঃ  ইংরেজ শাসনকালে বাংলা 'বেঙ্গল' (Bengal) নামে পরিচিত ছিল। ষোলো ও সতেরো শতকে ইউরোপীয়দের লেখনীতে 'বেঙ্গালা' নামের দেশের উল্লেখ পাওয়া যায়। মার্কা পোলো বেঙ্গালা শহরের উল্লেখ করছেন। গ্যাস্টলদি তাঁর মানচিত্রে চাটিগ্রামের পশ্চিমে বেঙ্গালার অবস্থিত দেখিয়েছেন। ২. আহমদ রফিকের মতেঃ  আহমদ রফিক 'বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ' গ্রন্থে বলেছেন,'......... তবে গঙ্গারাষ্ট্র বা গঙ্গাহৃদি নামীয় স্বাধীন বাংলা-ভূখন্ড সর্বপ্রাচীন রাজ্য হিসেবে স্বীকৃত। ৩. অজয় রায়ের মতেঃ   অজয় রায় 'বাঙালির জন্ম' প্রবন্ধে বলেন, 'বঙ্গ&#