Skip to main content

প্রশ্নোত্তরঃ হযরত মুহাম্মদ (স) এর মদিনা হিজরত বলতে কী বুঝ? অথবা, হযরত মুহাম্মদ (স) মদিনা হিজরত সম্পর্কে যা জান লিখ।

ভূমিকাঃ হযরত মুহাম্মদ (স)  প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করা পর থেকেই মক্কার কাফিররা তার উপর নানা অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ন চালায় ইসলামের প্রচার বন্ধ করার জন্য। কিন্তু তিনি সব অত্যাচার সহ্য করেও ইসলাম প্রচার চালিয়ে যায়। বিধর্মী কুরাইশদের অত্যাচারের মাত্রা যখন বৃদ্ধি পায় তখন মুহাম্মদ (স) আল্লাহর নিকট হতে মদিনায় হিজরতের প্রত্যাদেশ বা ওহি লাভ করেন। শূরা ইয়াসীনে বর্ণিত ঐশী বাণী লাভ করে তিনি মদিনার উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করেন।
হযরত মুহাম্মদ (স) এর মদিনায় হিজরতঃ হযরত মুহাম্মদ (স)  মক্কার পরিস্থিতি নাজুক দেখে তার শিষ্যদের একে একে মদিনায় হিজরত করতে নির্দেশ দেন। আবিসিনিয়া থেকে ফিরে আসা ২০০ জন এবং মক্কার সকল মুসলমানকে তিনি মদিনায় হিজরত করতে নির্দেশ দিলেন। শুধু মাত্র হযরত আবুবকর ও হযরত আলী (রা)  মুহাম্মদ (স) এর সাথে মক্কায় রয়ে গেলেন। এতে কুরাইশরা ক্রুদ্ধ হয়ে হযরত মুহাম্মদ (স) কে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। হযরত মুহাম্মদ (স) যখন নিশ্চিত মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছিলেন ঠিক সেই সময় তিনি আল্লাহর নিকট হতে মদিনায় হিজরতের প্রত্যাদেশ বা ওহি লাভ করেন। স্বর্গীয় প্রত্যাদেশ পাওয়ার পর নবী করিম (স) হযরত আবুবকর (রা)  কে সঙ্গে নিয়ে গৃহত্যাগ করেন। গৃহ ত্যাগ করার সময় তিনি কাবার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন,"হে আমার স্বদেশ, সমগ্র জগৎ অপেক্ষা তুমি আমার অতি প্রিয়। কিন্তু তোমার সন্তানরা আমাকে এখানে থাকতে দিল না। তাই বাধ্য হয়ে তোমাকে ছেড়ে চলে গেলাম, বিদায়!"
হযরত মুহাম্মদ (স) ও হযরত আবুবকর (রা)  দ্রুতগতিতে মক্কার অদূরে সওর পর্বতের গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। কুরাইশরা হযরতকে গৃহে না পেয়ে এদিক-ওদিক ছোটছুটি করতে লাগল। কিন্তু তারা কোথাও পেল না। তিন দিন তিন রাত সওর পর্বতের গুহায় তারা আত্মাগোপন করে থাকে।
চতুর্থত দিনে মুহাম্মদ (স)  এবং আবুবকর (রা) গুহা থেকে বের হয়ে কাফিরদের গতিবিধি লক্ষ্য রেখে সচরাচর চলার পথ পরিহার করে লোহিত সাগরের উপকূল ধরে মদিনার দিকে চলতে থাকেন। ৬২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হযরত মুহাম্মদ (স)মদিনা থেকে ৩ মাইল দূরে 'কুবা' নামক স্থানে উপস্থিত হয়। কুবায় তারা চার দিন অবস্থান করেন এবং কুবাবাসীকে ইসলাম ধর্ম দীক্ষা দেন। তিনি সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। রাসূল (স) কর্তৃক নির্মিত এটাই প্রথম মসজিদ। এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর  মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল শুক্রবার মদিনায় গিয়ে উপস্থিত হন। মক্কা হতে মদিনায় নবীজীর এ সুপরিকল্পিত প্রস্থানকে হিজরত বলা হয়।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, হযরত মুহাম্মদ (স)  এর এবং ইসলামের ইতিহাসে  হিজরত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কেননা মদিনায় হিজরতের পর ইসলামের অগ্রগতি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে। মদিনায় ইসলাম ধর্ম দ্রুত প্রসার লাভ করে এবং অল্প সময়ে আরব ভূমি ইসলামের ছায়াতলে আসে। দুর্বলতার যুগ অতিক্রম করে ইসলাম সমৃদ্ধির যুগে পদার্পণ করে।

Comments

Popular posts from this blog

প্রশ্নোত্তরঃ আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে কি বুঝ? অথবা, আইয়্যামে জাহেলিয়া কি?

ভূমিকাঃ ইসলামের আবির্ভাব মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইসলাম পূর্ব আরবের সামাজিক জীবন অনাচার, কুসংস্কার, নিষ্ঠুরতা ও নানা পাপাচারে পরিপূর্ণ ছিল। ঐ সময়ে আরবে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা বিদ্যমান ছিল। এ বিশৃঙ্খলা অবস্থাকে 'আইয়ামে জাহেলিয়া যুগ' বলা হয়েছে। আইয়ামে জাহেলিয়াঃ  ইসলাম পূর্ব যুগকে সাধারণভাবে 'আইয়ামে জাহেলিয়া'  বা অন্ধকার যুগ বলা হয়। আরবি ভাষায় 'আইয়াম' শব্দের অর্থ যুগ বা সময় এবং 'জাহেলিয়া' অর্থ অন্ধকার যুগ, কুসংস্কার, অজ্ঞাত ইত্যাদি। সুতরাং আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে অজ্ঞতার যুগ বা অন্ধকার যুগ  বুঝায়। সে যুগে আরবে কোন প্রকার কৃষ্টি, ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মীয় চেতানা ছিল না। তবে প্রকৃত পক্ষে ইসলাম পূর্ব আরবীয়দের অজ্ঞ বলে অবহেলা করা যায় না। অজ্ঞ এই অর্থে বলা হয় সে যুগে আরবে কোন ধর্মপ্রচারক, সমাজসংস্কারক, শান্তি স্থাপনকারী ছিল না এবং আল্লাহ সম্পর্কে তারা অজ্ঞ ছিল। আইয়ামে জাহেলিয়ার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টি বলেন, " আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে এমন একটি সময়কাল কে বুঝায়, যখন আরবে কোন বিধিবিধান ছিল না, কোন ধর্মপ্রচারক ছিল না, কোম ধর্মগ্রন্থ ছিল না।

প্রশ্নোত্তরঃ উকাজ মেলা সম্পর্কে যা জানো লিখ। অথবা, উকাজ মেলা সম্পর্কে আলোচনা কর। অথবা, উকাজ মেলা কি?

ভূমিকাঃ  আরবদের মধ্যে যে সাহিত্যচর্চা প্রচলিত উকাজের মেলা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রাচীন আরবের কবিরা মক্কার অদূরে উকাজের বাৎসরিক মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতেন। সেখানে নাচাগান, নানাপ্রকার খেলাধুলা, ঘোড়দৌড় ও উঠের দৌড়ের প্রতিযোগিতা হতো। অন্যদিকে, প্রতি বছর এ মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতা হতো। কথিত আছে, উকাজের মেলায় পুরস্কার প্রাপ্ত সাতটি কবিতা সোনালি অক্ষরে লিপিবদ্ধ করে কাবার দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়া হতো। একে আরবিতে 'সাব আল মুয়াল্লাকা' বলা হতো। উকাজ মেলাঃ  প্রাক ইসলামি যুগে গীতিকাব্য রচনা ও সাহিত্য চর্চায় আরবদের বিস্ময়কর সৃজনশীল শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। গীতিকবিতা বা কাসিদা ছিল প্রাচীন আরব সংস্কৃতির অন্যতম সম্পদ। ঐতিহ্যবাহী হিট্টি বলেন, "কাব্য প্রীতিই ছিল বেদুইনদের সাংস্কৃতিক সম্পদ।" সে যুগে আরবদের মধ্যে যে সাহিত্য চর্চা প্রচলিত ছিল, উকাজের মেলা এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ। প্রতি বছর এ মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। এ  সাহিত্য সভায় কাব্য চর্চার দ্বারা সংশ্লিষ্ট কবিগণ নিজেদের কৃতিত্ব প্রকাশ করতেন। বৎসরে সেরা কবিতা গুলোকে মিশরের লিলেন কাপড়ের উপর লিখে কা

প্রশ্নোত্তরঃ বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি হয় কীভাবে? অথবা, বাংলা নামের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে? অথবা, বঙ্গ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ  বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। কারো কারো মতে, বঙ্গ নাম থেকেই বঙ্গাল এবং পরবর্তীতে বাঙালা নামের উৎপত্তি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, অতীতের বং নামের এক জনগোষ্ঠী  এ অঞ্চলে বসবাস করত এবং তাদের নাম অনুযায়ী অঞ্চলটি বঙ্গ নামে পরিচিত লাভ করে। আবার অনেকেই মনে করেন জলমগ্ন স্যাঁতস্যাঁতে অঞ্চলকে বঙ্গ বা বাংলা বলা হয়।  বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তিঃ  নিম্নে বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ ১. ভ্রমণকারীদের লেখনীতে বাংলাঃ  ইংরেজ শাসনকালে বাংলা 'বেঙ্গল' (Bengal) নামে পরিচিত ছিল। ষোলো ও সতেরো শতকে ইউরোপীয়দের লেখনীতে 'বেঙ্গালা' নামের দেশের উল্লেখ পাওয়া যায়। মার্কা পোলো বেঙ্গালা শহরের উল্লেখ করছেন। গ্যাস্টলদি তাঁর মানচিত্রে চাটিগ্রামের পশ্চিমে বেঙ্গালার অবস্থিত দেখিয়েছেন। ২. আহমদ রফিকের মতেঃ  আহমদ রফিক 'বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ' গ্রন্থে বলেছেন,'......... তবে গঙ্গারাষ্ট্র বা গঙ্গাহৃদি নামীয় স্বাধীন বাংলা-ভূখন্ড সর্বপ্রাচীন রাজ্য হিসেবে স্বীকৃত। ৩. অজয় রায়ের মতেঃ   অজয় রায় 'বাঙালির জন্ম' প্রবন্ধে বলেন, 'বঙ্গ&#