Skip to main content

Posts

প্রশ্নোত্তরঃ আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে কি বুঝ? অথবা, আইয়্যামে জাহেলিয়া কি?

ভূমিকাঃ ইসলামের আবির্ভাব মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইসলাম পূর্ব আরবের সামাজিক জীবন অনাচার, কুসংস্কার, নিষ্ঠুরতা ও নানা পাপাচারে পরিপূর্ণ ছিল। ঐ সময়ে আরবে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা বিদ্যমান ছিল। এ বিশৃঙ্খলা অবস্থাকে 'আইয়ামে জাহেলিয়া যুগ' বলা হয়েছে। আইয়ামে জাহেলিয়াঃ  ইসলাম পূর্ব যুগকে সাধারণভাবে 'আইয়ামে জাহেলিয়া'  বা অন্ধকার যুগ বলা হয়। আরবি ভাষায় 'আইয়াম' শব্দের অর্থ যুগ বা সময় এবং 'জাহেলিয়া' অর্থ অন্ধকার যুগ, কুসংস্কার, অজ্ঞাত ইত্যাদি। সুতরাং আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে অজ্ঞতার যুগ বা অন্ধকার যুগ  বুঝায়। সে যুগে আরবে কোন প্রকার কৃষ্টি, ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মীয় চেতানা ছিল না। তবে প্রকৃত পক্ষে ইসলাম পূর্ব আরবীয়দের অজ্ঞ বলে অবহেলা করা যায় না। অজ্ঞ এই অর্থে বলা হয় সে যুগে আরবে কোন ধর্মপ্রচারক, সমাজসংস্কারক, শান্তি স্থাপনকারী ছিল না এবং আল্লাহ সম্পর্কে তারা অজ্ঞ ছিল। আইয়ামে জাহেলিয়ার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টি বলেন, " আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে এমন একটি সময়কাল কে বুঝায়, যখন আরবে কোন বিধিবিধান ছিল না, কোন ধর্মপ্রচারক ছিল না, কোম ধর্মগ্রন্থ ছিল না।

প্রশ্নোত্তরঃ আরবের অবস্থান ব্যাখ্যা কর। অথবা, আরবের ভৌগোলিক অবস্থানের বিবরণ দাও।

ভূমিকাঃ  আরব পৃথিবীর বৃহত্তম উপদ্বীপ। বিশ্ব মানচিত্রে এটি দেখতে অনেকটা ত্রিভুজাকৃতির। আরব এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ভাগে অবস্থিত। ভৌগোলিক দিক দিয়ে আরব উপদ্বীপের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম ধর্মের তীর্থস্থান এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর জন্মভূমি হিসেবে আরব উপদ্বীপের গুরুত্ব অপরিসীম। আরবের অবস্থানঃ  আরব এশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ উপদ্বীপসমূহের অন্যতম। আরবের তিন দিক পানি এবং একদিক স্থল দ্বারা পরিবেষ্টিত। এ কারণে এদেশকে আরবি ভাষায় 'জাজিরাতুল আরব' বা আরব উপদ্বীপ (Arab peninsula) বলে অভিহিত করা হয়। এর উত্তরদিকে সিরিয়ার মরুভূমি, পূর্বদিকে পারস্য উপসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং পশ্চিমে লোহিত সাগর। আয়তনঃ  বিশ্বের মানচিত্রে সবচেয়ে বড় উপদ্বীপ আরবের অবস্থান এশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে। আরব উপদ্বীপের ক্ষেত্রফল ১০,২৭,০০০ বর্গমাইল (২৬,৫৮,৭৮১ বর্গ কি.মি.) এবং জনসংখ্যা ১ কোটি ২০ লক্ষ। আয়তনে এটি ইউরোপের এক চতুর্থাংশ এবং আমেরিকার এক তৃতীয়াংশ। ভূপ্রকৃতিঃ  আরব উপদ্বীপটি পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে পারস্য উপসাগর ও মেসোপোটেমিয়ার নিম্নভূমর দিকে ক্রমশ ঢালু হ

প্রশ্নোত্তরঃ জাহেলিয়া যুগের রাজনৈতিক অবস্থা আলোচনা কর। অথবা, জাহেলিয়া যুগের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল? ব্যাখ্যা কর। অথবা, প্রাক-ইসলামী আরবের রাজনৈতিক চিত্র তুলে ধর।

ভূমিকাঃ  ইসলাম পূর্ব যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল বিশৃঙ্খলাপূর্ণ এবং হতাশাব্যঞ্জক। কেন্দ্রী শাসনের অভাবে সমগ্র আরব শত সহস্র গোত্রে বিভক্ত ছিল। এই গোত্রি ছিল আরবদের রাজনৈতিক জীবনেরব মূলন ভিত্তি। জাহেলিয়া যুগে রাজনৈতিক অবস্থাঃ  জাহেলিয়া যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। ইসলাম পূর্ব আরবে কোম কেন্দ্রীয় সরকার ছিল না। উত্তর আরবে বাইজান্টাইন এবং দক্ষিণ আরবের পারস্য প্রভাবিত কয়েকটি রাজ্য ছাড়া সমগ্র আরব এলাকা ছিল স্বাধীন। এ কারণে আররের রাজনৈতিক অবস্থাও ছিল অস্থিতিশীল  ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ।  সমগ্র আরব ছিল শত শত গোত্রে বিভক্ত। গোত্র শাসনই ছিল আরবীয়দের রাষ্ট্রীয়  জীবনের মূল ভিত্তি। গোত্রের প্রধান বা দলপতিকে বলা হতো শেখ। শেখ নির্বাচিত হবার জন্য বংশ গৌরব, মহানুভবতা, বীরত্ব প্রভৃতি মানবিক গুণাবলীর প্রয়োজনে হতো। কোন কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত না থাকায় আরব গোত্রগুলো প্রায় কলহে লিপ্ত থাকত।  কোন গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের যুদ্ধ বাধলে তা যুগ যুগ ধরে চলত। গোত্র যুদ্ধের মূল ম্নত্র ছিল "Blood for blood"। কখনও খুনের কেসারত " Blood money" প্রদান করলে যুদ্ধের অবসান হতো। মক্কায় ক

প্রশ্নোত্তরঃ আরবদেশকে 'জাজিরাতুল আরব' বলা হয় কেন? অথবা 'জাজিরাতুল আরব' বলা হয় কোন দেশকে এবং কেন?

ভূমিকাঃ  ইসলামের জন্মভূমি আরব এশিয়ার দক্ষিণপশ্চিম ভাগে অবস্থিত পৃথিবীর প্রাচীনতম বৃহত্তম উপদ্বীপ। 'জাজিরাতুল আরব' নামে খ্যাত এ আরবভূমির অবস্থানও ভৌগোলিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে জন্ম নিয়েছে বিশ্বের একাধিক সভ্যতা। ইসলাম ধর্মের তীর্থস্থান এবং মহানবী (স) এর জন্মভূমি হিসেবে আরব উপদ্বীপের এবং তাৎপর্য  অনেক। 'জাজিরাতুল আরব' বলার কারণঃ  তিন দিক সাগর এবং একদিক স্থল দ্বারা পরিবেষ্টিত বলে একে আরব উপদ্বীপ বলা হয়। এ কারণে এদেশকে আরবি ভাষায় 'জাজিরাতুল আরব' বলে অভিহিত করা হয়। জাজিরা শব্দ অর্থ উপদ্বীপ বা উপকূল। আরবভূমিকে 'জাজিরাতুল আরব' বলার পিছনে যে কয়েকটি কারণ দাড় করানো যায় তা নিম্নরূপঃ ১. অর্থে দিক থেকেঃ  জাজিরাতুল আরব শব্দের অর্থ আরব উপদ্বীপ। আরব উপদ্বীপ বলতে বুঝায় তিন দিকে জলরাশি দ্বারা বেষ্টিত স্থলভাগকে। সুতরাং অর্থ গত দিক থেকে এটিকে 'জাজিরাতুল আরব' বলা হয়। ২. ভূখণ্ডের দিক থেকেঃ  আরবের তিনদিকে জল এবং এক দিকে স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত বলে আরববাসীরা একে 'জাজিরাতুল আরব' বা আরব উপদ্বীপ বলে অভিহিত করেছে। এটি এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা এ তিনটি

প্রশ্নোত্তরঃ আরব শব্দের অর্থ কী? আরবের নামকরণ বলতে কী বুঝ? অথবা, আরব সব্দটির অর্থ কী? আরব নামকরণের সার্থকতা বিচার কর।

ভূমিকাঃ ইসলাম  ধর্মের তীর্থস্থান এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর জন্মভূমি হিসেবে আরব উপদ্বীপের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা এই তিন মহাদেশের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় ভৌগোলিকভাবে আরবের গুরুত্ব অনেক বেশি। ঐতিহাসিক P.K Hitti বলেন, "Arabia is the south western peninsula of Asia, the largest peninsula on the map." আরব শব্দের অর্থঃ  আরব শব্দের আভিধানিক অর্থ মরুভূমি। আরবের অধিকাংশ স্থান মরুময় বলে এরুপ নামকরণ হয়েছে বলে সাধারণ ভাবে মনে করা হয়। আরবে এক অতি প্রাচীন আধিবাসী কাহতাম নামক এক ব্যক্তির পুত্র 'ইরুব' বা ইয়ারিবের নামানুসারে আরব নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করে। আবার অনেকের মতে, প্রাচীনকালে হেজাজ অঞ্চলে 'আরাবা' নামের যে স্থানটি ছিল তার নামনুসারে উপদ্বীপটির নাম আরব হয়েছে। আরব শব্দটি 'আরাবাতুন' থেকেও আসতে পারে। কারণ আরাবাতুন অর্থ গহিন মরুভূমি। উপসংহারঃ  পরিশেষে বলা যায়, ইসলামের জন্ম ও বিকাশের কেন্দ্ররুপে এবং আল্লাহর অফুরন্ত রহমতের উৎসভূমি হিসেবে আরবদেশ পৃথিবীর তিনটি মহাদেশের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হয়ে অতি সহজে সারাবিশ্বের দৃষ্টি আ

প্রশ্নোত্তরঃ হযরত মুহাম্মদ (স) এর মদিনা হিজরত বলতে কী বুঝ? অথবা, হযরত মুহাম্মদ (স) মদিনা হিজরত সম্পর্কে যা জান লিখ।

ভূমিকাঃ  হযরত মুহাম্মদ (স)  প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করা পর থেকেই মক্কার কাফিররা তার উপর নানা অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ন চালায় ইসলামের প্রচার বন্ধ করার জন্য। কিন্তু তিনি সব অত্যাচার সহ্য করেও ইসলাম প্রচার চালিয়ে যায়। বিধর্মী কুরাইশদের অত্যাচারের মাত্রা যখন বৃদ্ধি পায় তখন মুহাম্মদ (স) আল্লাহর নিকট হতে মদিনায় হিজরতের প্রত্যাদেশ বা ওহি লাভ করেন। শূরা ইয়াসীনে বর্ণিত ঐশী বাণী লাভ করে তিনি মদিনার উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করেন। হযরত মুহাম্মদ (স) এর মদিনায় হিজরতঃ  হযরত মুহাম্মদ (স)  মক্কার পরিস্থিতি নাজুক দেখে তার শিষ্যদের একে একে মদিনায় হিজরত করতে নির্দেশ দেন। আবিসিনিয়া থেকে ফিরে আসা ২০০ জন এবং মক্কার সকল মুসলমানকে তিনি মদিনায় হিজরত করতে নির্দেশ দিলেন। শুধু মাত্র হযরত আবুবকর ও হযরত আলী (রা)  মুহাম্মদ (স) এর সাথে মক্কায় রয়ে গেলেন। এতে কুরাইশরা ক্রুদ্ধ হয়ে হযরত মুহাম্মদ (স) কে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। হযরত মুহাম্মদ (স) যখন নিশ্চিত মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছিলেন ঠিক সেই সময় তিনি আল্লাহর নিকট হতে মদিনায় হিজরতের প্রত্যাদেশ বা ওহি লাভ করেন। স্বর্গীয় প্রত্যাদেশ পাওয়ার পর নবী করিম (স) হযরত আবুবকর (রা)  ক

প্রশ্নোত্তরঃ হযরত মুহাম্মদ (স) এর মদিনায় হিজরতের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর। অথবা, হযরত মুহাম্মদ (স) এর মদিনায় হিজরতের কারণ কি ছিল? এর ফলাফল উল্লেখ কর। অথবা, হিজরতের চারটি কারণ লিখ?

ভূমিকাঃ  নবুয়ত প্রাপ্তির পর ১২ বছর হযরত মুহাম্মদ (স)  মক্কায় অবস্থান করে ইসলাম প্রচার করে। কিন্তু এ সময়ে ইসলামের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়নি। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে বিধর্মী কুরাইশদের অত্যাচারের মাত্রা যখন বৃদ্ধি পায় তখন মুহাম্মদ (স) আল্লাহর নিকট হতে মদিনায় হিজরতের প্রত্যাদেশ বা ওহি লাভ করে, মদিনার পথে হিজরত করেন। হিজরতের কারণঃ  মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)  নবুয়তের ১২ বছর পর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মাতৃভূমি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। তার এই হিজরতের পিছনে বেশ কিছু কারণ ছিল। ১. আকাবার শপথঃ   আকারবার শপথ কালে হযরত মুহাম্মদ (স) ইয়াসরীবের কিছু সংখ্যক লোককে ইসলামে দীক্ষিত করেন। তাদের অনুপ্রেরণায় মহানবী (স)  হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন। ২. আউস ও খাযরাজ গোত্রে আহবানঃ  মদিনার আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্ব্যয়ের মধ্যে বিরোধ ছিল। তাদের মধ্যে কয়েক বছর ধরে বুয়াসের যুদ্ধ চলছিল। তারা এমন এক ব্যক্তিত্বকে খুজছিল যে তাদের মধ্যে শান্তি স্থাপন করতে পারে। মুহাম্মদ (স) এর মধ্যে এ গুণের সন্ধান পেয়ে তারা মুহাম্মদ (স)  কে সাদরে আমন্ত্রণ জানায়। ৩. হত্যার ষড়যন্ত্রঃ  কুরাইশরা যখন দেখল, ইসলাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মহানবী (স)