Skip to main content

Posts

Showing posts from December, 2019

প্রশ্নোত্তর: এক তরুণী তার বান্ধবীর বাপের সাথে পুরুষের ন্যায় কোলাকুলি করেছে, ইসলামী ফয়সালা কি?

প্রশ্নঃ  এক মেয়েকে তার বান্ধবীর বাপের সাথে পুরুষের ন্যায় কোলাকুলি করতে দেখে তাকে ভদ্রভাবে মোহরেম/গায়রে মোহরেম, মেয়েদের হিজাব ইত্যাদি ব্যাপারে বুঝালে সে উত্তরে বলে- ‘এই যদি ইসলামের বিধান হয় তবে আমি এ ইসলাম মানি না।’ এ অবস্থায় মেয়েটি কি মুরতাদ হবে? যদি হয় তবে তার মা/বাবা, ভাই-বোনদের সাথে সম্পর্ক কিরূপ হবে? সে কি মা/বাবার সম্পত্তিতে মিরাছের অধিকারী হবে? উত্তরঃ  বান্ধবীর পিতা নিজের পিতা নয় বিধায় বান্ধবীর পিতার সাথে কোন মহিলার (প্রাপ্ত বয়স্ক) এভাবে কোলাকুলি করার ইসলামী শরীয়তে অনুমতি নাই। এ ধরনের আচরণ অনেক সময় গুনাহ্-নাফরমানীর দিকে ধাবিত করে- এ জাতীয় অবাধ আচরণে পশ্চিমা দেশে জেনা-নাফরমানী- সীমা অতিক্রম করেছে। তাই ইসলাম নারী জাতীর মান-সম্মান, ইজ্জত, আবরু রক্ষার জন্য শালীন আচরণ ও পর্দা-পুশিদার বিধান প্রদান করেছে। এটা না বুঝে যদি কোন মহিলা/পুরুষ এ কথা বলে- ‘এই যদি ইসলামের বিধান হয় তবে আমি এ ইসলাম মানি না।’ তাকে প্রথমে ইসলামের আদর্শ মর্মবাণী ও তাহজীব তামাদ্দুন বুঝাতে হবে এবং ইসলাম নারী জাতীর মর্যাদা ও সম্মান কত উচুঁ করেছে তা জানাতে হবে। তবে কোন মুসলিম নর-নারী জেনে শুনে বুঝে ইসলামকে কটাক্ষ ক

প্রশ্নোত্তরঃঃ ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর। অথবা, ইতিহাস পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর। অথবা, মানবজীবনে ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃ মানবসমাজ ও সভ্যতার বিবর্তনের সত্য নির্ভর বিবরণ হচ্ছে ইতিহাস। যে জ্ঞানচর্চার শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব অসীম। ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত ও জাতিগতভাবে ইতিহাসের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিহাসকে মানুষের আত্মোপলব্ধির চাবিকাঠি বলা হয়েছে। ইতিহাস পড়ে মানুষ স্বীয় প্রকৃতি বিষয় জানতে পারে। স্বীয় প্রকৃতি জানার অর্থ হল মানুষ কী করতে সক্ষম সে বিষয়ে  ধারণা নেয়া। কেউই জানে না সে কি করতে সক্ষম। তা জানার একমাত্র উপায় হলো মানুষের অতীত কার্যক্রমের সাথে পরিচিত হওয়া। ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে তা সম্ভব হয়। নিম্নে ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলঃ ১. ইতিহাস জ্ঞান ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করেঃ  অতীতের সত্যনিষ্ঠ বর্ণনা মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আর এ বিবরণ যদি হয় নিজ দেশ, জাতির সফল সংগ্রাম ও গৌরবময় ঐতিহ্যের তাহলে তা মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। একই সাথে আত্মপ্রত্যয়ী, আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করার মাধ্যমে মানুষকে আত্মমর্যাদাবান করে তোলে। ২. ইতিহাস সচেতনতা বৃদ্ধি করেঃ ইতিহাসের জ্ঞান মানুষকে সচেতন করে তোলে৷ বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর উত্থানপতন এবং সভ্যতার বিকাশ ও পতনের কারণগুলো জানতে পারলে মানুষ ভালো

প্রশ্নোত্তরঃ উকাজ মেলা সম্পর্কে যা জানো লিখ। অথবা, উকাজ মেলা সম্পর্কে আলোচনা কর। অথবা, উকাজ মেলা কি?

ভূমিকাঃ  আরবদের মধ্যে যে সাহিত্যচর্চা প্রচলিত উকাজের মেলা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রাচীন আরবের কবিরা মক্কার অদূরে উকাজের বাৎসরিক মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতেন। সেখানে নাচাগান, নানাপ্রকার খেলাধুলা, ঘোড়দৌড় ও উঠের দৌড়ের প্রতিযোগিতা হতো। অন্যদিকে, প্রতি বছর এ মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতা হতো। কথিত আছে, উকাজের মেলায় পুরস্কার প্রাপ্ত সাতটি কবিতা সোনালি অক্ষরে লিপিবদ্ধ করে কাবার দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়া হতো। একে আরবিতে 'সাব আল মুয়াল্লাকা' বলা হতো। উকাজ মেলাঃ  প্রাক ইসলামি যুগে গীতিকাব্য রচনা ও সাহিত্য চর্চায় আরবদের বিস্ময়কর সৃজনশীল শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। গীতিকবিতা বা কাসিদা ছিল প্রাচীন আরব সংস্কৃতির অন্যতম সম্পদ। ঐতিহ্যবাহী হিট্টি বলেন, "কাব্য প্রীতিই ছিল বেদুইনদের সাংস্কৃতিক সম্পদ।" সে যুগে আরবদের মধ্যে যে সাহিত্য চর্চা প্রচলিত ছিল, উকাজের মেলা এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ। প্রতি বছর এ মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। এ  সাহিত্য সভায় কাব্য চর্চার দ্বারা সংশ্লিষ্ট কবিগণ নিজেদের কৃতিত্ব প্রকাশ করতেন। বৎসরে সেরা কবিতা গুলোকে মিশরের লিলেন কাপড়ের উপর লিখে কা

প্রশ্নোত্তরঃ হানিফ বা হানাফি সম্প্রদায়ের এর উপর টিকা লিখ। অথবা, হানিফ সম্প্রদায় কি?

ভূমিকাঃ  প্রাক ইসলামি যুগে আরবে একদল লোকেরা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করতেন। তারা স্বতন্ত্রভাবে জীবনযাপন করতেন এবং মূর্তিপূজার বিরোধী ছিলেন। পৌত্তলিক আরবে তারা হানিফ নামে পরিচিত ছিলেন। হানিফ সম্প্রদায়ঃ  আইয়ামে জাহেলিয়া বা অন্ধকার যুগে মদিনায় হানিফ নামে একটি একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করত। তারা এক আল্লাহতে বিশ্বাস করতো এবং ইব্রাহিমের ধর্মের উপর তাদের আস্থা ছিল। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ওরাকা ইবনে নওফেল, আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাস, কবি জুহাইর,  আবুবকর, যায়েদ বিন আমর, আবু আনাস প্রমুখ। তাছারা হযরত মুহাম্মদ (স)  এর জ্ঞাতি ভাই উমাইয়া বিন আবিসালাতও ছিলেন একেশ্বরবাদে বা হানাফিয়া সম্প্রদায়ের। সাবেয়িগণ বিশ্বাস করতো যে, তারা হযরত ঈসা ও হযরত ইদ্রিস (আ) এর অনুসারী। হানাফিরা সংখ্যায় কম ছিলেন ফলে তারা আরবের উপর কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। উপসংহারঃ  পরিশেষে বলা যায় যে, ধর্মীয় কুসংস্কার ও অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগেও আরবে একেশ্বরবাদী বিশ্বাসী (আস্তিক) ছিল। আস্তিকেরা আল্লাহকে সত্য জেনে তার অস্তিত্যকে বিশ্বাস করতো।

প্রশ্নোত্তরঃ জাহেলিয়া যুগের আরবীয়দের ধর্মীয় জীবন আলোচনা কর। অথবা, ইসলাম পূর্ব যুগে আরবীয়দের ধর্মীয় অবস্থা আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ  প্রাক ইসলামি যুগে আরবের ধর্মীয় অবস্থা শোচনীয় ও অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল না ধরনের। পৌত্তলিক, জড়বাদী, ইহুদি, খ্রিস্টান,হানাফি প্রভৃতি। ১. পৌত্তলিকঃ  পুতুল পূজা বা পৌত্তলিকা ছিল আরবদের সার্বজনীন ধর্ম। আদ, সামুদ, জাদিস, জারহাম এবং আমালিক প্রভৃতি গোত্রের লোকেরা ছিল সম্পূর্ণভাবে মুশরিক বা পৌত্তলিক। আল-লাত, আল-মানাহ এবং আল-উজ্জাক নামক দেবীকে আরববাসীরা একত্রে 'আল্লাহর তিন কন্যা' বলে মনে করতো। ইসলাম পূর্ব যুগে মক্কা নগরে অবস্থিত কাবা গৃহ আরবদের শ্রেষ্ঠতম পবিত্র ধর্মমন্দির ছিল। এ মন্দিরে ৩৬০ টি দেবদেবী ছিল৷ কাবা ঘরের রক্ষিত মূর্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মূর্তি বা দেবতার নাম ছিল হোবল। ২. হানাফিঃ  ধর্মীয় কুসংস্কার ও অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগেও আরবে একদল বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন যারা এক আল্লাহতে বিশ্বাস করতো এবং ইব্রাহিমের ধর্মের উপর তাদের আস্থা ছিল। এজন্য তাদের হানাফি বলা হতো। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ওরাকা ইবনে নওফেল, আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাস, কবি জুহাইর,  আবুবকর, যায়েদ বিন আমর, আবু আনাস প্রমুখ। তারা একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করতেন এবং কোন প্রকার মূর্তি পূজা করতো না। কিন্তু তার

প্রশ্নোত্তরঃ প্রাক ইসলামি যুগে নারীদের অবস্থা কেমন ছিল? অথবা, প্রাক ইসলামি যুগে নারীদের অবস্থা কি ছিল?

ভূমিকাঃ  সমকালীন ইতিহাসে উল্লিখিত যে কোন দেশের তুলনায় প্রাক ইসলামি যুগে আরবের নারীদের অবস্থা ছিল শোচনীয়। এ যুগে আরবরা নারীদের অস্থাবর সম্পত্তি ও ভোগের সামগ্রী বলে মনে করতো এবং তাদের অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখত। সমাজে নারীর অবস্থাঃ  জাহেলিয়া যুগে সমাজে নারীর অবস্থা ছিল অতি নিম্নে। নারীদেরকে সে সমাজে পণ্যদ্রব্য এবং ভোগের সামগ্রী হিসেবে মনে করা হতো। তাদের আর্থসামাজিক,  সম্পত্তি ভোগের কোন মর্যাদা ছিল না বলে পতিতাবৃত্তি সমাজে স্বীকৃতি পায়। নারীরা সর্বত্র পুরুষদের দ্বারা নিগৃহীত হতো। তবে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। মক্কায় বিবি খাদিজা ও আবু জেহেলের মা সে যুগে মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। বিবাহ প্রথাঃ  ইসলাম পূর্ব যুগে বিবাহ প্রথায় সুনির্দিষ্ট কোন রীতি ছিল না। পুরুষরা একাধিক স্ত্রী গ্রহণ, ইচ্ছামতো বর্জন, অবৈধ প্রণয় এবং বহু রক্ষিতা রাখত। তেমনি নারীরাও একাধিক স্বামী বা বহুপতি গ্রহণ ও ব্যভিচারে লিপ্ত হতো। শুধু তাই নয় ভাইবোন বিয়ে ও বিমাতাকে বিয়ে করার কুপ্রথা প্রচলিত ছিল। পতিতাবৃত্তিও চালু ছিল। কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দানঃ  প্রাক-ইসলামি যুগে কন্যা সন্তান জন্মদান অভিশাপ হিসেবে বিবেচিত হতো। দারিদ্র্য

প্রশ্নোত্তরঃ সাব আল মুয়াল্লাকা বা সপ্ত ঝুলন্ত কবিতা কি?

ভুমিকাঃ  ইসলাম পূর্ব যুগে আরদের মধ্যে কাব্যচর্চার প্রচলন ছিল। কাব্যের প্রতি আরবদের  আগ্রহ ছিল প্রবল। কবিতার মাধ্যমে আরবরা তাদের দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা সংরক্ষণ করে রাখত। এসব কবিতার মধ্যে গীতি কবিতা ছিল অন্যতম। এসব গীতি কবিতার মধ্যে সাব আল মুয়াল্লাকা ছিল অন্যতম। সাতজন কবি মিলে এ সাব আল মুয়াল্লাকা রচনা করেন। সাব আল মুয়াল্লাকাঃ  আরবের কবিরা মক্কার অদূরে উকাজ বাৎসরিক মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতেন। এ প্রতিযোগিতায় আরবের বড় বড় কবিরা স্বরচিত কবিতার প্রতিযোগিতা করতেন। আরবের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হতেন। বৎসরের সেরা কবিতাগুলোকে সোনালী হরফে মিশরের লিলেন কাপরের উপর লিখে কাবা ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়া হতো। এরুপ সাতটি কবিতার সমষ্টি ' সাব   আল মুয়াল্লাকা' বা 'Seven suspended poems'  নামে অভিহিত। ইমরুল কায়েস, তারাফা লাবিদ, হারিস, আনতারা প্রমুখ ছিলেন মুয়াল্লাকার প্রধান প্রধান কবি। এদের মধ্যে অসাধারণ প্রতিভাশালী ছিলেন ইমরুল কায়েস। তিনি প্রাক ইসলামি যুগে শ্রেষ্ঠ কবির মর্যাদা লাভ করেন। উপসংহারঃ  পরিশেষে বলা যায়, প্রাক ইসলামি যুগে সাহিত্য বলতে কবিতাকে বুঝ

প্রশ্নোত্তরঃ আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে কি বুঝ? অথবা, আইয়্যামে জাহেলিয়া কি?

ভূমিকাঃ ইসলামের আবির্ভাব মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইসলাম পূর্ব আরবের সামাজিক জীবন অনাচার, কুসংস্কার, নিষ্ঠুরতা ও নানা পাপাচারে পরিপূর্ণ ছিল। ঐ সময়ে আরবে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা বিদ্যমান ছিল। এ বিশৃঙ্খলা অবস্থাকে 'আইয়ামে জাহেলিয়া যুগ' বলা হয়েছে। আইয়ামে জাহেলিয়াঃ  ইসলাম পূর্ব যুগকে সাধারণভাবে 'আইয়ামে জাহেলিয়া'  বা অন্ধকার যুগ বলা হয়। আরবি ভাষায় 'আইয়াম' শব্দের অর্থ যুগ বা সময় এবং 'জাহেলিয়া' অর্থ অন্ধকার যুগ, কুসংস্কার, অজ্ঞাত ইত্যাদি। সুতরাং আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে অজ্ঞতার যুগ বা অন্ধকার যুগ  বুঝায়। সে যুগে আরবে কোন প্রকার কৃষ্টি, ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মীয় চেতানা ছিল না। তবে প্রকৃত পক্ষে ইসলাম পূর্ব আরবীয়দের অজ্ঞ বলে অবহেলা করা যায় না। অজ্ঞ এই অর্থে বলা হয় সে যুগে আরবে কোন ধর্মপ্রচারক, সমাজসংস্কারক, শান্তি স্থাপনকারী ছিল না এবং আল্লাহ সম্পর্কে তারা অজ্ঞ ছিল। আইয়ামে জাহেলিয়ার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টি বলেন, " আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে এমন একটি সময়কাল কে বুঝায়, যখন আরবে কোন বিধিবিধান ছিল না, কোন ধর্মপ্রচারক ছিল না, কোম ধর্মগ্রন্থ ছিল না।

প্রশ্নোত্তরঃ আরবের অবস্থান ব্যাখ্যা কর। অথবা, আরবের ভৌগোলিক অবস্থানের বিবরণ দাও।

ভূমিকাঃ  আরব পৃথিবীর বৃহত্তম উপদ্বীপ। বিশ্ব মানচিত্রে এটি দেখতে অনেকটা ত্রিভুজাকৃতির। আরব এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ভাগে অবস্থিত। ভৌগোলিক দিক দিয়ে আরব উপদ্বীপের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম ধর্মের তীর্থস্থান এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর জন্মভূমি হিসেবে আরব উপদ্বীপের গুরুত্ব অপরিসীম। আরবের অবস্থানঃ  আরব এশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ উপদ্বীপসমূহের অন্যতম। আরবের তিন দিক পানি এবং একদিক স্থল দ্বারা পরিবেষ্টিত। এ কারণে এদেশকে আরবি ভাষায় 'জাজিরাতুল আরব' বা আরব উপদ্বীপ (Arab peninsula) বলে অভিহিত করা হয়। এর উত্তরদিকে সিরিয়ার মরুভূমি, পূর্বদিকে পারস্য উপসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং পশ্চিমে লোহিত সাগর। আয়তনঃ  বিশ্বের মানচিত্রে সবচেয়ে বড় উপদ্বীপ আরবের অবস্থান এশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে। আরব উপদ্বীপের ক্ষেত্রফল ১০,২৭,০০০ বর্গমাইল (২৬,৫৮,৭৮১ বর্গ কি.মি.) এবং জনসংখ্যা ১ কোটি ২০ লক্ষ। আয়তনে এটি ইউরোপের এক চতুর্থাংশ এবং আমেরিকার এক তৃতীয়াংশ। ভূপ্রকৃতিঃ  আরব উপদ্বীপটি পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে পারস্য উপসাগর ও মেসোপোটেমিয়ার নিম্নভূমর দিকে ক্রমশ ঢালু হ

প্রশ্নোত্তরঃ জাহেলিয়া যুগের রাজনৈতিক অবস্থা আলোচনা কর। অথবা, জাহেলিয়া যুগের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল? ব্যাখ্যা কর। অথবা, প্রাক-ইসলামী আরবের রাজনৈতিক চিত্র তুলে ধর।

ভূমিকাঃ  ইসলাম পূর্ব যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল বিশৃঙ্খলাপূর্ণ এবং হতাশাব্যঞ্জক। কেন্দ্রী শাসনের অভাবে সমগ্র আরব শত সহস্র গোত্রে বিভক্ত ছিল। এই গোত্রি ছিল আরবদের রাজনৈতিক জীবনেরব মূলন ভিত্তি। জাহেলিয়া যুগে রাজনৈতিক অবস্থাঃ  জাহেলিয়া যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। ইসলাম পূর্ব আরবে কোম কেন্দ্রীয় সরকার ছিল না। উত্তর আরবে বাইজান্টাইন এবং দক্ষিণ আরবের পারস্য প্রভাবিত কয়েকটি রাজ্য ছাড়া সমগ্র আরব এলাকা ছিল স্বাধীন। এ কারণে আররের রাজনৈতিক অবস্থাও ছিল অস্থিতিশীল  ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ।  সমগ্র আরব ছিল শত শত গোত্রে বিভক্ত। গোত্র শাসনই ছিল আরবীয়দের রাষ্ট্রীয়  জীবনের মূল ভিত্তি। গোত্রের প্রধান বা দলপতিকে বলা হতো শেখ। শেখ নির্বাচিত হবার জন্য বংশ গৌরব, মহানুভবতা, বীরত্ব প্রভৃতি মানবিক গুণাবলীর প্রয়োজনে হতো। কোন কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত না থাকায় আরব গোত্রগুলো প্রায় কলহে লিপ্ত থাকত।  কোন গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের যুদ্ধ বাধলে তা যুগ যুগ ধরে চলত। গোত্র যুদ্ধের মূল ম্নত্র ছিল "Blood for blood"। কখনও খুনের কেসারত " Blood money" প্রদান করলে যুদ্ধের অবসান হতো। মক্কায় ক

প্রশ্নোত্তরঃ আরবদেশকে 'জাজিরাতুল আরব' বলা হয় কেন? অথবা 'জাজিরাতুল আরব' বলা হয় কোন দেশকে এবং কেন?

ভূমিকাঃ  ইসলামের জন্মভূমি আরব এশিয়ার দক্ষিণপশ্চিম ভাগে অবস্থিত পৃথিবীর প্রাচীনতম বৃহত্তম উপদ্বীপ। 'জাজিরাতুল আরব' নামে খ্যাত এ আরবভূমির অবস্থানও ভৌগোলিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে জন্ম নিয়েছে বিশ্বের একাধিক সভ্যতা। ইসলাম ধর্মের তীর্থস্থান এবং মহানবী (স) এর জন্মভূমি হিসেবে আরব উপদ্বীপের এবং তাৎপর্য  অনেক। 'জাজিরাতুল আরব' বলার কারণঃ  তিন দিক সাগর এবং একদিক স্থল দ্বারা পরিবেষ্টিত বলে একে আরব উপদ্বীপ বলা হয়। এ কারণে এদেশকে আরবি ভাষায় 'জাজিরাতুল আরব' বলে অভিহিত করা হয়। জাজিরা শব্দ অর্থ উপদ্বীপ বা উপকূল। আরবভূমিকে 'জাজিরাতুল আরব' বলার পিছনে যে কয়েকটি কারণ দাড় করানো যায় তা নিম্নরূপঃ ১. অর্থে দিক থেকেঃ  জাজিরাতুল আরব শব্দের অর্থ আরব উপদ্বীপ। আরব উপদ্বীপ বলতে বুঝায় তিন দিকে জলরাশি দ্বারা বেষ্টিত স্থলভাগকে। সুতরাং অর্থ গত দিক থেকে এটিকে 'জাজিরাতুল আরব' বলা হয়। ২. ভূখণ্ডের দিক থেকেঃ  আরবের তিনদিকে জল এবং এক দিকে স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত বলে আরববাসীরা একে 'জাজিরাতুল আরব' বা আরব উপদ্বীপ বলে অভিহিত করেছে। এটি এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা এ তিনটি

প্রশ্নোত্তরঃ আরব শব্দের অর্থ কী? আরবের নামকরণ বলতে কী বুঝ? অথবা, আরব সব্দটির অর্থ কী? আরব নামকরণের সার্থকতা বিচার কর।

ভূমিকাঃ ইসলাম  ধর্মের তীর্থস্থান এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর জন্মভূমি হিসেবে আরব উপদ্বীপের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা এই তিন মহাদেশের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় ভৌগোলিকভাবে আরবের গুরুত্ব অনেক বেশি। ঐতিহাসিক P.K Hitti বলেন, "Arabia is the south western peninsula of Asia, the largest peninsula on the map." আরব শব্দের অর্থঃ  আরব শব্দের আভিধানিক অর্থ মরুভূমি। আরবের অধিকাংশ স্থান মরুময় বলে এরুপ নামকরণ হয়েছে বলে সাধারণ ভাবে মনে করা হয়। আরবে এক অতি প্রাচীন আধিবাসী কাহতাম নামক এক ব্যক্তির পুত্র 'ইরুব' বা ইয়ারিবের নামানুসারে আরব নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করে। আবার অনেকের মতে, প্রাচীনকালে হেজাজ অঞ্চলে 'আরাবা' নামের যে স্থানটি ছিল তার নামনুসারে উপদ্বীপটির নাম আরব হয়েছে। আরব শব্দটি 'আরাবাতুন' থেকেও আসতে পারে। কারণ আরাবাতুন অর্থ গহিন মরুভূমি। উপসংহারঃ  পরিশেষে বলা যায়, ইসলামের জন্ম ও বিকাশের কেন্দ্ররুপে এবং আল্লাহর অফুরন্ত রহমতের উৎসভূমি হিসেবে আরবদেশ পৃথিবীর তিনটি মহাদেশের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হয়ে অতি সহজে সারাবিশ্বের দৃষ্টি আ

প্রশ্নোত্তরঃ হযরত মুহাম্মদ (স) এর মদিনা হিজরত বলতে কী বুঝ? অথবা, হযরত মুহাম্মদ (স) মদিনা হিজরত সম্পর্কে যা জান লিখ।

ভূমিকাঃ  হযরত মুহাম্মদ (স)  প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করা পর থেকেই মক্কার কাফিররা তার উপর নানা অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ন চালায় ইসলামের প্রচার বন্ধ করার জন্য। কিন্তু তিনি সব অত্যাচার সহ্য করেও ইসলাম প্রচার চালিয়ে যায়। বিধর্মী কুরাইশদের অত্যাচারের মাত্রা যখন বৃদ্ধি পায় তখন মুহাম্মদ (স) আল্লাহর নিকট হতে মদিনায় হিজরতের প্রত্যাদেশ বা ওহি লাভ করেন। শূরা ইয়াসীনে বর্ণিত ঐশী বাণী লাভ করে তিনি মদিনার উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করেন। হযরত মুহাম্মদ (স) এর মদিনায় হিজরতঃ  হযরত মুহাম্মদ (স)  মক্কার পরিস্থিতি নাজুক দেখে তার শিষ্যদের একে একে মদিনায় হিজরত করতে নির্দেশ দেন। আবিসিনিয়া থেকে ফিরে আসা ২০০ জন এবং মক্কার সকল মুসলমানকে তিনি মদিনায় হিজরত করতে নির্দেশ দিলেন। শুধু মাত্র হযরত আবুবকর ও হযরত আলী (রা)  মুহাম্মদ (স) এর সাথে মক্কায় রয়ে গেলেন। এতে কুরাইশরা ক্রুদ্ধ হয়ে হযরত মুহাম্মদ (স) কে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। হযরত মুহাম্মদ (স) যখন নিশ্চিত মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছিলেন ঠিক সেই সময় তিনি আল্লাহর নিকট হতে মদিনায় হিজরতের প্রত্যাদেশ বা ওহি লাভ করেন। স্বর্গীয় প্রত্যাদেশ পাওয়ার পর নবী করিম (স) হযরত আবুবকর (রা)  ক

প্রশ্নোত্তরঃ হযরত মুহাম্মদ (স) এর মদিনায় হিজরতের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর। অথবা, হযরত মুহাম্মদ (স) এর মদিনায় হিজরতের কারণ কি ছিল? এর ফলাফল উল্লেখ কর। অথবা, হিজরতের চারটি কারণ লিখ?

ভূমিকাঃ  নবুয়ত প্রাপ্তির পর ১২ বছর হযরত মুহাম্মদ (স)  মক্কায় অবস্থান করে ইসলাম প্রচার করে। কিন্তু এ সময়ে ইসলামের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়নি। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে বিধর্মী কুরাইশদের অত্যাচারের মাত্রা যখন বৃদ্ধি পায় তখন মুহাম্মদ (স) আল্লাহর নিকট হতে মদিনায় হিজরতের প্রত্যাদেশ বা ওহি লাভ করে, মদিনার পথে হিজরত করেন। হিজরতের কারণঃ  মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)  নবুয়তের ১২ বছর পর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মাতৃভূমি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। তার এই হিজরতের পিছনে বেশ কিছু কারণ ছিল। ১. আকাবার শপথঃ   আকারবার শপথ কালে হযরত মুহাম্মদ (স) ইয়াসরীবের কিছু সংখ্যক লোককে ইসলামে দীক্ষিত করেন। তাদের অনুপ্রেরণায় মহানবী (স)  হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন। ২. আউস ও খাযরাজ গোত্রে আহবানঃ  মদিনার আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্ব্যয়ের মধ্যে বিরোধ ছিল। তাদের মধ্যে কয়েক বছর ধরে বুয়াসের যুদ্ধ চলছিল। তারা এমন এক ব্যক্তিত্বকে খুজছিল যে তাদের মধ্যে শান্তি স্থাপন করতে পারে। মুহাম্মদ (স) এর মধ্যে এ গুণের সন্ধান পেয়ে তারা মুহাম্মদ (স)  কে সাদরে আমন্ত্রণ জানায়। ৩. হত্যার ষড়যন্ত্রঃ  কুরাইশরা যখন দেখল, ইসলাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মহানবী (স)

প্রশ্নোত্তরঃ আনসার ও মোহাজের কারা? অথবা, আনসার ও মোহাজেরদের পরিচয় দাও।

ভূমিকাঃ  ইসলাম প্রচারে যে সমস্ত সম্প্রদায় সর্বোতভাবে সহযোগিতা করেছিলেন তাদের অন্যতম গুরুত্ব সম্প্রদায় হলো আনসার ও মোহাজের। নিজেদের জীবন ও সম্পদ ইসলামের স্বার্থে উৎর্সগ করে মুহাম্মদ (স)  এর উদ্দেশ্য ও স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠিত করতে সর্বদা পাশে ছিলো। তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া ইসলামকে সুদৃঢ় প্রসারী করা অসম্ভব হতো। মোহাজের কারাঃ  যে সকল সাহাবী নিজ জন্মভূমি মক্কা পরিত্যাগ করে মহানবীর নির্দেশে মদিনায় হিজরত করেন তারা 'মুহাজেরীন' বা শরণার্থী বলা হয়। মহানবী (স) এর প্রতি তাদের অপআনসাররিসীম শ্রদ্ধা ছিল।  তারা ইসলামের জন্য ঘরবাড়ি, আত্মীয়স্বজন ত্যাগ করে সর্বপ্রকার দুঃখ কষ্ট বরণ করেছিলেন। আনসার বা সাহায্যকারী কারাঃ যে সব নবদীক্ষিত মদিনাবাসী মক্কা হতে আগত মুসলমানদের কে আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং হযরতের সকল অবস্থাতে সাহায্য করেছিলেন, তারা 'আনসার' বা সাহায্যকারী। মদিনায় আগত মুসলমানদের আনসারগ্ণ নিজের আত্মীয় হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন এবং নিজেদের অংশ দান করেছিলেন। তাদের এই ত্যাগ ও সহযোগিতা ইতিহাসে বিরল। উপসংহারঃ  পরিশেষে বলা যায়ঃ আনসার ও মোহাজেরদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন এতই সুদৃঢ় হয়ে উঠেছিল যে

প্রশ্নোত্তরঃ মদিনা সনদের পাঁচটি শর্ত লিখ। অথবা, মদিনা সনদের উল্লেখযোগ্য পাঁচটি ধারা লিখ।

ভূমিকাঃ  ইসলামের ইতিহাসে মদিনা সনদের  গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপক। মদিনায় বসবাসরত সম্প্রদায়সমূহের মধ্যে ঐক্য, সম্প্রীতি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মহানবী (স)  ৬২৪ খ্রি. লিখিত যে চুক্তিভবা সনদ প্রণয়ন করেন তা মদিনা সনদ। এই সনদের মাধ্যমে মদিনার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সহযোগিতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নীতিও গৃহীত হয়।  মদিনা সনদের পাঁচটি উল্লেখযোগ্য ধারাঃ  মদিনা সনদে মোট ৪৭টি ধারা বা শর্ত ছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত সনদ হিসেবে এর গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে মদিনা সনদের পাঁচটি উল্লেখযোগ্য ধারা লিপিবদ্ধ হলোঃ ১.  মদিনা সনদে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়সমূহ (ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমান) সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে এবং সকলে মিলে সাধারণ জাতি গঠন করবে। ২.  হযরত মুহাম্মদ (স) নবগঠিত প্রজাতন্ত্রের সভাপতি এবং পাদাধিকার বলে মদিনার সর্বোচ্চ বিচারালয়ের প্রধান হবেন। ৩.  পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে। মুসলমান ও অমুসলমান সম্প্রদায় স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। ৪.  স্বাক্ষরকারী কোন সম্প্রদায়কে বহিঃশত্রু আক্রমণ করলে সকল সম্প্রদায় সমবেত প্রচেষ্টায় বহিঃশত্রুর আক্রমণকে প

প্রশ্নোত্তরঃ বাঙালিকে সংকর জাতি বলা হয় কেন? অথবা, "বাঙালি একটি সংকর জাতি।"- ব্যাখ্যা কর। অথবা, বাঙালি স্বতন্ত্র না কি সংকর জাতি?

ভূমিকাঃ  বাঙালি নরগোষ্ঠী বহুকাল ধরে বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। কালের গতি ধারায় বিভিন্ন জাতি বর্ণের রক্তপ্রবাহ বাঙালি জাতির ধমনীতে প্রবাহিত হয়েছে। এ কারণে অনেক নৃবিজ্ঞানী বাঙালি জাতিকে সংকর জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বাঙালি কে সংকর জাতি বলার কারণঃ  র্দীঘকাল বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে এ আদি মানুষেরা বঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বসবায়া শুরু করে৷ এসব জনগোষ্ঠী একে অপরের সাথে মিশ্রিত হয় শতকের পর শতকব্যাপী। মনে করা হয়, আদি অস্ট্রেলীয়রাই বাংলার প্রাচীনতম বাসিন্দা। বাংলাদেশের সাঁওতাল, রাজবংশী প্রভৃতি আদি অস্ট্রেলীয়দের সাথে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের জলপ্রবাহে মঙ্গোলীয়দের রক্তেরও পরিচয় পাওয়া যায়। পারস্য জাতি ভারতবর্ষে আগমনের ফলে বাঙালির রক্তে নতুন মিশ্রণ ঘটে। অনেকের ধারণা বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর উপর আর্যদের প্রভাব রয়েছে। ব্রাহ্মণ, বৈদ্য ও কায়স্থদের মধ্যে এদের প্রভাব কম-বেশি লক্ষ করা যায়। নৃবিজ্ঞানী হটন উপমহাদেশের জনগোষ্ঠীকে যে ৮ ভাগে বিভক্ত করেছেন সেগুলোর মধ্যে আলপাইন একটি। তিনি বলেছেন, আলপাইন মানব গোষ্ঠীর সাথে বাঙালি জনগোষ্ঠীর অনেক দৈহিক মিল আছে। মূলত আলপাইন আর্যভাষী ইন্দো-ইরানী গোষ্ঠী। ঐতিহাস

প্রশ্নোত্তরঃ বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি হয় কীভাবে? অথবা, বাংলা নামের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে? অথবা, বঙ্গ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ  বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। কারো কারো মতে, বঙ্গ নাম থেকেই বঙ্গাল এবং পরবর্তীতে বাঙালা নামের উৎপত্তি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, অতীতের বং নামের এক জনগোষ্ঠী  এ অঞ্চলে বসবাস করত এবং তাদের নাম অনুযায়ী অঞ্চলটি বঙ্গ নামে পরিচিত লাভ করে। আবার অনেকেই মনে করেন জলমগ্ন স্যাঁতস্যাঁতে অঞ্চলকে বঙ্গ বা বাংলা বলা হয়।  বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তিঃ  নিম্নে বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ ১. ভ্রমণকারীদের লেখনীতে বাংলাঃ  ইংরেজ শাসনকালে বাংলা 'বেঙ্গল' (Bengal) নামে পরিচিত ছিল। ষোলো ও সতেরো শতকে ইউরোপীয়দের লেখনীতে 'বেঙ্গালা' নামের দেশের উল্লেখ পাওয়া যায়। মার্কা পোলো বেঙ্গালা শহরের উল্লেখ করছেন। গ্যাস্টলদি তাঁর মানচিত্রে চাটিগ্রামের পশ্চিমে বেঙ্গালার অবস্থিত দেখিয়েছেন। ২. আহমদ রফিকের মতেঃ  আহমদ রফিক 'বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ' গ্রন্থে বলেছেন,'......... তবে গঙ্গারাষ্ট্র বা গঙ্গাহৃদি নামীয় স্বাধীন বাংলা-ভূখন্ড সর্বপ্রাচীন রাজ্য হিসেবে স্বীকৃত। ৩. অজয় রায়ের মতেঃ   অজয় রায় 'বাঙালির জন্ম' প্রবন্ধে বলেন, 'বঙ্গ&#

প্রশ্নোত্তরঃ হিজরত বলতে কী বুঝ? অথবা, হিজরত কী?

ভূমিকাঃ  হযরত মুহাম্মদ (স)  প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করা পর থেকেই মক্কার কাফিররা তার উপর নানা অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ন চালায় ইসলামের প্রচার বন্ধ করার জন্য। কিন্তু তিনি সব অত্যাচার সহ্য করেও ইসলাম প্রচার চালিয়ে যায়। অতঃপর মক্কার বিধর্মী কুরাইশরা হযরত মুহাম্মদ (স) কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে আল্লাহর প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হয়ে তিনি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন।  হিজরতের পরিচয়ঃ  'হিজরত' শব্দটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ দেশত্যাগ,  ছেড়ে দেয়া, বর্জন করা, ফেলে আসা ও স্থানান্তরিত হওয়া। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মাতৃভূমি ত্যাগ করে অন্য কোন দেশে যাওয়াকে হিজর বলে। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে হযরত মুহাম্মদ (স)  এর মক্কা থেকে ইয়াসরিব বা মদিনা গমনকে হিজরত বলে। মক্কার কাফিররা দারুল নাদওয়া নামক বৈঠকে রাসূল (স) কে হত্যার দিনক্ষণ ঠিক করলে রাসূল (স) তাদের এ ষড়যন্ত্র জানতে পারেন। হযরত মুহাম্মদ (স)  হযরত আবু বকর (রা) এর গৃহে গমন করেন এবং তাকে অবগত করান। ' দারুল নাদওয়া' বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হত্যাসংঘ রাতে কুরাইশরা হযরত মুহাম্মদ (স)  এর গৃহ ঘিরে রাখে।

প্রশ্নোত্তর: অমুসলিম মেয়েকে বিবাহ্ করা জায়েয কিনা?

প্রশ্নঃ মুসলিম ছেলে বিদেশ থেকে অমুসলিম মেয়ে বিয়ে করে দেশে আসলে তার ভাই/বোন ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন উক্ত বিবাহকে স্বীকৃতি দানপূর্বক অনুষ্ঠানাদি করে আনন্দ উল্লাস করে থাকে। তা কি ইসলামে গ্রহণযোগ্য? এ অবস্থায় ছেলে, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনের ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব। উত্তরঃ  অমুসলিম ও বর্তমান ইয়াহুদি-খ্রিস্টান মহিলার সাথে কোন মুসলিম পুরুষের বিবাহ্ ও নেকাহ্ বৈধ নয়। যেহেতু পশ্চিমা দেশের বর্তমান ইয়াহুদি-খ্রিস্টান আমাদের প্রিয় রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি ও মান-হানিকর উক্তি করে যার দরুণ তাদেরকে আহলে কিতাব বা কিতাবীদের অন্তর্ভুক্ত বলা যাবে না। বরং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠধর্ম ইসলাম সম্পর্কে তাদের কটূক্তি ও বেয়াদবীর কারণে তারা ঈমান হতে খারিজ হয়ে গেছে। তাদেরকে ঈমান-ইসলাম শিক্ষা দিয়ে মুসলিম বানিয়ে তখন মুসলিম পুরুষ তাদেরকে বিবাহ্ করতে পারবে। এর সওয়াব ও ফযিলত অনেক বেশি। কোন মুসলিম ছেলে সঠিক মাসয়ালা না জেনে বা ধর্মীয় জ্ঞান না থাকায় বিদেশ থেকে অমুসলিম মেয়েকে বিয়ে করে দেশে আসলে তার ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজনের পরম দা